সীমান্তের সামরিক বেড়ার পাশে কাজ করছেন উত্তর কোরিয়ার মানুষ। ২০২৪ সালের জুনে দক্ষিণ কোরিয়ার পাজু অঞ্চল থেকে নেওয়া
সীমান্তের সামরিক বেড়ার পাশে কাজ করছেন উত্তর কোরিয়ার মানুষ। ২০২৪ সালের জুনে দক্ষিণ কোরিয়ার পাজু অঞ্চল থেকে নেওয়া

‘সীমানাপ্রাচীর’ তৈরি করছে উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া প্রতিবেশী বৈরী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় ভবনের অংশবিশেষ তৈরি করছে, যা আসলে ‘সীমানাপ্রাচীর’ বলে দৃশ্যমাণ হয়েছে। সম্প্রতি স্যাটেলাইটে ধারণ করা কিছু আলোকচিত্র বিশ্লেষণ করে এমনটাই মনে হয়েছে।

বিবিসির একটি বিশেষজ্ঞ দল আলোকচিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখেছে। বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, দুই দেশের মধ্যবর্তী বেসামরিক অঞ্চলের (ডিএমজেড) নিজের অংশ পরিষ্কার করেছে উত্তর কোরিয়া। এতে করে দুই দেশের দীর্ঘদিনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডিএমজেড হলো উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত অঞ্চলে চার কিলোমিটার প্রশস্ত একটি বেসামরিক অঞ্চল। অঞ্চলটি দুই ভাগে বিভক্ত। যার যার ভাগের অংশ সে সে দেশ নিয়ন্ত্রণ করে।

১৯৫৩ সালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়। অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হলেও দেশ দুটি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো শান্তি চুক্তি করেনি। তাই কৌশলগতভাবে দেশ দুটির মধ্যে এখনো যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে।

পিয়ংইয়ং ও সিউলের মধ্যে সম্প্রতি উত্তেজনা বেড়েছে। এমন একটা সময়ে সীমান্ত অঞ্চলে প্রাচীর তৈরির মতো কর্মকাণ্ডকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিউলভিত্তিক এনকে নিউজের সাংবাদিক শ্রেয়াস রেড্ডি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া যা করছে, তাতে আমাদের মনে হচ্ছে, দেশটি সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।’

বিবিসির বিশ্লেষণ করে দেখা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্যাটেলাইট আলোকচিত্রগুলো একটি প্রকল্পের অংশ। সাত কিলোমিটার দীর্ঘ উত্তর কোরিয়া সীমান্তের একটি অংশে কী পরিবর্তন ঘটছে, সেটা বুঝতে পারাই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।

স্যাটেলাইট আলোকচিত্রগুলোতে দেখা যায়, ডিএমজেড অংশের নিকটবর্তী অন্তত তিনটি অংশে প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। প্রাচীর তিনটি করা হয়েছে সীমান্তের পূর্ব দিকের শেষের দিকের প্রায় এক কিলোমিটার অংশজুড়ে।

এসব প্রাচীর কবে তৈরি করা হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট তারিখ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কারণ, ওই অঞ্চলে আগে যেসব স্যাটেলাইট ছিল, সেগুলো উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ছিল না। তবে এটা নিশ্চিত যে ২০২৩ সালের নভেম্বরে যেসব আলোকচিত্র ধারণ করা হয়েছিল, তাতে এসব অবকাঠামো দেখা যায়নি।

সিউলের আসান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের সামরিক ও প্রতিরক্ষাবিশেষজ্ঞ ড. ইউকে ইয়াং বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো, দুই দেশকে আলাদা করার জন্য এবারই প্রথমবারের মতো একটি প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। ১৯৯০–এর দশকে উত্তর কোরিয়া সীমান্তে ট্যাংকরোধী প্রাচীর তৈরি করেছিল। কোনো সময় যুদ্ধ শুরু হলে (দক্ষিণ কোরিয়ার) ট্যাংকের গতি রোধ করতেই তা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি দু-তিন মিটার উচ্চতার যেসব প্রাচীর তৈরি করছে, সেগুলো ট্যাংকরোধী কোনো প্রাচীন নয়। প্রাচীরগুলোর গঠন দেখে মনে হচ্ছে, শুধু ট্যাংকের অগ্রযাত্রা ঠেকানো নয়; বরং ওই অঞ্চলকে আলাদা করাই এসব প্রাচীর তৈরির উদ্দেশ্য।’