কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হুন মানেতকে নির্বাচিত করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের বড় ছেলে তিনি। গত জুলাই মাসে প্রধান বিরোধী দল ছাড়াই কম্বোডিয়ায় একতরফা নির্বাচন হয়। এতে জয়ী হয় হুন সেনের কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
নির্বাচনের এক মাস পর মঙ্গলবার কম্বোডিয়ার পার্লামেন্ট সদস্যদের সর্বসম্মত ভোটে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন হুন মানেত। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেন পার্লামেন্ট সদস্য হেন সামরিন। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর পার্লামেন্ট সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণ দেন নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। তিনি বলেন, ‘কম্বোডিয়ার ইতিহাসে আজ ঐতিহাসিক একটি দিন।’
প্রায় চার দশক ধরে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন হুন সেন। গত মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। বড় ছেলে হুন মানেতকে ক্ষমতায় বসানোর কথা জানিয়েছিলেন তখন।
হুন মানেত বলেন, অর্থনীতি চাঙা করার ওপর গুরুত্ব দেবে তাঁর সরকার। এ ছাড়া মানুষের জীবিকা বাড়ানো, সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে দেশকে প্রতিষ্ঠা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে খাওয়ানো যায়, সেটির ওপরও জোর দেওয়া হবে।
নবগঠিত সরকারের মন্ত্রিসভার একটি খসড়া তালিকা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, শীর্ষ পদগুলোতে হুন মানেতের আত্মীয়স্বজন ও হুন সেনের সহযোগীদের সন্তানদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। হুন সেনের কনিষ্ঠ ছেলে হুন মানেকে সিভিল সার্ভিস মন্ত্রী করা হতে পারে। অপর দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা ও বর্তমান পুলিশপ্রধান নেথ সেভুইনকে দেওয়া হতে পারে উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। বর্তমান স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তাঁদের দুই ছেলে।
হুন সেনের বয়স ৭০ বছর ছুঁয়েছে। শাসনামলের শুরুর দিকে তিনি ভিয়েতনামপন্থী কমিউনিস্ট শাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এরপর কম্বোডিয়ায় জাতিসংঘ-সমর্থিত বহুদলীয় ব্যবস্থা চালু হয়। তখনো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হুন সেন। বর্তমানে হুন সেন দেশটিতে একনায়কতান্ত্রিক শাসন চালু রেখেছেন।
প্রধান বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচনের আয়োজন করায় কম্বোডিয়া সরকারের নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ। তারা বলেছে, গত মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হুন মানেত। উল্টো ওই নির্বাচনকে ‘স্বচ্ছ নির্বাচন’ অভিহিত করেছেন তিনি।
হুন মানেত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় বাবার তুলনায় উদার হবেন, এমন কিছু কাজ করেছেন তিনি। তিনি ক্ষমতাসীন পিপিপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। ২০১৮ সাল থেকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং অন্যতম। চীন কম্বোডিয়ার অন্যতম মিত্রদেশ।