একটি দাতব্য হোমের প্রবেশ ফটক টেপ এঁটে দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়ার সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর। সেলাঙ্গর রাজ্যের সুবাং জায়া শহর। ১২ সেপ্টেম্বর
একটি দাতব্য হোমের প্রবেশ ফটক টেপ এঁটে দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে মালয়েশিয়ার সমাজকল্যাণ অধিদপ্তর। সেলাঙ্গর রাজ্যের সুবাং জায়া শহর। ১২ সেপ্টেম্বর

মালয়েশিয়ায় দাতব্য হোম থেকে ৪০২ শিশু-কিশোর উদ্ধার, অভিযোগ নির্যাতনের

মালয়েশিয়ার দুটি রাজ্যে ২০টি দাতব্য হোম থেকে ৪০২ শিশু ও কিশোরী-কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের শারীরিক ও যৌন হয়রানি করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার পুলিশ ইন্সপেক্টর-জেনারেল রাজারুদ্দিন হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, পুলিশ এ ঘটনায় ১৭১ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে হোমের ধর্মীয় শিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক রয়েছেন।

পুলিশ ইন্সপেক্টর-জেনারেল রাজারুদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী এই শিশু-কিশোরদের বয়স ১ থেকে ১৭ বছর। তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে অন্য শিশুদের সঙ্গে যৌনকর্ম করতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যের একটি হোমে শিশুদের শোষণ, শ্লীলতাহানি ও যৌন নির্যাতনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই গতকাল সেলাঙ্গর ও নেগেরি সেম্বিলান রাজ্যের ২০টি দাতব্য হোমে পুলিশ অভিযান চালায়।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্সপেক্টর জেনারেল রাজারুদ্দিন হোসেন

সাংবাদিকদের বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের বয়স ১৭ থেকে ৬৪। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা শিশুদের বাজেভাবে স্পর্শ করেছেন। কিছু কিছু শিশুকে সেখানে থাকা অন্য শিশুদের সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করতে বাধ্য করা হতো। শিশুদের গরম ধাতব বস্তু দিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। এমনকি অসুস্থ শিশুদের অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হতো না।
উদ্ধার করার পর শিশুদের রাজধানী কুয়ালালামপুরে পুলিশ সেন্টারে রাখা হয়েছে। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামার খবরে বলা হয়, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের জন্য অনেক মা–বাবা তাঁদের সন্তানদের এসব দাতব্য হোমে দিয়েছিলেন।
দেশটির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক গ্লোবাল ইখওয়ান গ্রুপের (জিআইএসবি) বিরুদ্ধে শিশুদের শোষণের অভিযোগ তদন্ত শুরুর কয়েক দিনের মধ্যে এই অভিযান চালানো হলো। এর আগে অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে এ দুই ঘটনার মধ্যে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

নিউ স্ট্রেইটস টাইমসের খবরে বলা হয়, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ আয়ুব খান মাইদিন পিচে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে তহবিল সংগ্রহের জন্য এই দাতব্য হোমগুলো তৈরি করে। তবে বাণিজ্যিক এই গ্রুপ তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ফেসবুকে একটি বিবৃতি পোস্ট করেছে। সেখানে বলা হয়, ‘আইনের বিরুদ্ধে যায়, এমন কোনো কার্যকলাপের সঙ্গে প্রতিষ্ঠান আপস করবে না, বিশেষ করে শিশুদের শোষণের বিষয়ে।’ জিআইএসবির ২০টি দেশে খাদ্য, শিক্ষাসহ হোটেল সেক্টরে ব্যবসা রয়েছে।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হিউম্যান রাইটস কমিশন অব মালয়েশিয়া এ ধরনের দাতব্য হোমগুলোকে কঠোর আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে। কমিশনের শিশুবিষয়ক কমিশনার ফারাহ নিনি দুসুকি অনলাইন নিউজ সাইট ফ্রি মালয়েশিয়া টুডেকে বলেন, ‘সমস্যা হলো এই জায়গাগুলো ঠিকঠাক নজরদারি করা হয় না। পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে।’