ইন্দোনেশিয়া সফরে আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ ‘ইসতিকলাল’ পরিদর্শন ও সেখানে বিভিন্ন ধর্মের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন বিশ্ব ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। বৈঠকে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করবেন তিনি।
একই দিন ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে হাজারো মানুষের এক সমাবেশে যোগ দেবেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোপ তিন দিনের এক সফরে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া রয়েছেন। আজ সকালে ঐতিহাসিক ইসতিকলাল মসজিদ পরিদর্শন ও বিকেলে ফুটবল স্টেডিয়ামে আন্তধর্মীয় সমাবেশে তাঁর যোগদান করা হবে এ সফরের প্রধান দুই কর্মসূচি। ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার মধ্য দিয়ে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে দীর্ঘ সফরের সূচনা করেছেন তিনি।
বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখছে ব্যক্তিস্বার্থ। যখন প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় ভ্রাতৃত্বের চেতনায় কাজ করে, তখনই নানা বৈচিত্র্যের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন অর্জন করা সম্ভব।পোপ ফ্রান্সিস, ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ধর্মগুরু
এসব কর্মসূচিতে পোপ তাঁর দেওয়া বক্তব্যে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাবেন। ইতিমধ্যে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা রাখছে ব্যক্তিস্বার্থ।
আজ সকালে ইসতিকলাল মসজিদে পোপের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার ছয়টি ধর্মের নেতদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
স্থাপত্য নৈপুণ্যের অপূর্ব নিদর্শন ইসতিকলাল মসজিদের সঙ্গে ‘আওয়ার লেডি অব দ্য আজাম্পশন’ ক্যাথেড্রালের সংযোগ স্থাপনকারী সুড়ঙ্গ ‘টানেল অব ফ্রেন্ডশিপ’ ২৮ দশমিক ৩ মিটার দীর্ঘ। ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে ২০২০ সালে ইন্দোনেশিয়া সরকার সুড়ঙ্গটি নির্মাণ করে।
ইতিমধ্যে পোপ বলেছেন, বিশ্বশান্তি নিশ্চিত করতে শান্তিপূর্ণ ও ফলপ্রসূ সম্প্রীতির বন্ধন বেগবান করার লক্ষ্যে চার্চ আন্তধর্মীয় সংলাপ জোরাল করতে ইচ্ছুক। তিনি আরও বলেন, যখন প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় ভ্রাতৃত্বের চেতনায় কাজ করে, তখনই নানা বৈচিত্র্যের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন অর্জন করা সম্ভব।
ইন্দোনেশিয়ান বিশপস কানফারেন্সের তথ্য অনুযায়ী, সফরে ইসতিকলাল মসজিদের প্রধান ইমামের সঙ্গে এক যৌথ ঘোষণায় স্বাক্ষর করবেন পোপ ফ্রান্সিস। পরিবেশের সুরক্ষা এবং দ্বন্দ্ব–সংঘাতে সৃষ্ট ‘অমানবিকীকরণ’ ইত্যাদি বিষয় এ ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ফ্রান্সিসের এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলো সফরের মূল উপজীব্য বিষয় আন্তধর্মীয় সম্পর্ক। ইতিপূর্বে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একাধিক দেশ সফর করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে পোপ আল আজহারের প্রধান ইমামের সঙ্গে মানব ভ্রাতৃত্ব বিষয়ে এক নথিতে স্বাক্ষর করেন।
আজ সকালে ঐতিহাসিক ইসতিকলাল মসজিদ পরিদর্শন এবং বিকেলে জাকার্তার ফুটবল স্টেডিয়ামে আন্তধর্মীয় সমাবেশে যোগ দেওয়া পোপের ইন্দোনেশিয়া সফরের প্রধান দুই কর্মসূচি। ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার মধ্য দিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে দীর্ঘ সফরের সূচনা করেছেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়া সফরে পোপের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি বিকেলে দেশটির প্রধান ফুটবল স্টেডিয়ামে সমাবেশে তাঁর ভাষণ দেওয়া। সমাবেশে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্টেডিয়ামের বাইরেও হাজারো মানুষ উপস্থিত হবেন—এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
এ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ সমাবেশস্থলে রওনা হয়েছেন।
ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার তিন শতাংশের কিছু বেশি মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী; যা সংখ্যায় প্রায় ৮০ লাখ। অন্যদিকে, দেশটিতে মুসলিমদের সংখ্যা ৮৭ শতাংশ বা ২৪ কোটি ২০ লাখ।
দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে স্থানীয়ভাবে স্বীকৃত ছয়টি ধর্মের মানুষের বসবাস। ক্যাথলিক ও মুসলিমদের বাইরে প্রোটেস্ট্যান্ট, বৌদ্ধ, হিন্দু ও কনফুসিয়ানিজমে বিশ্বাসী মানুষেরা দেশটিতে বসবাস করেন।