তাইওয়ানের চারপাশে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চালাচ্ছে চীন। আজ বৃহস্পতিবার তাইওয়ানের পাশ ঘেঁষে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীনের সামরিক বাহিনী। তাইওয়ানের আশপাশে মহড়া দিচ্ছে চীনা যুদ্ধজাহাজ। বেইজিংয়ের দাবিকৃত স্বশাসিত এই দ্বীপটির আকাশ প্রতিরক্ষাসীমা দিয়ে উড়ে গেছে একাধিক চীনা যুদ্ধবিমান। মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির বিতর্কিত তাইওয়ান সফর শেষ হওয়ার পরদিন ক্ষুব্ধ চীন তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে এমন সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে। এর আগে পেলোসির সফর নিয়ে কয়েক দফায় ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ার করে সামরিক জবাবের হুমকি দিয়েছিল বেইজিং।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে চীনের এই সামরিক মহড়া শুরু হয়েছে। মহড়া শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই তা সম্প্রচার করতে শুরু করে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভি। সিসিটিভির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মহড়া শুরু হয়েছে। আগামী রোববার সকাল ১০টায় মহড়া শেষ হবে। তাইওয়ান প্রণালিতে এটি চীনের এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া। মহড়ায় তাইওয়ানের চারপাশ ও আকাশসীমায় সরাসরি অস্ত্রের মহড়া চালানো হবে।
চীনের ইস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে সামরিক মহড়া শুরু করেছে তারা। তাইওয়ানের উত্তর উপকূলের বিভিন্ন অংশে সমুদ্রে একাধিক প্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এর আগে ১৯৯৬ সালে সর্বশেষ তাইওয়ানের চারপাশ ঘিরে এভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল চীনা সামরিক বাহিনী। এদিকে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছে, তাইওয়ানের উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম জলসীমায় একাধিক ডংফেং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীন।
ঘটনা সম্পর্কে জানেন তাইওয়ানের এমন একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে চীনের নৌবাহিনীর একাধিক যুদ্ধজাহাজ ও দেশটির একাধিক সামরিক বিমান তাইওয়ান প্রণালির মধ্যবর্তী অবস্থানে বিতর্কিত সীমার ভেতর ঢুকে পড়ে। এদিন একাধিকবার সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এ ঘটনা ঘটে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চীনের এবং তাইওয়ানের একাধিক সামরিক নৌযান সেখানে দেখা যায়। এর মধ্যে তাইওয়ান ও চীনের নৌযানগুলো মুখোমুখি অবস্থানেও দাঁড়িয়েছিল।
তাইওয়ানের নিরাপত্তা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ কিছু প্রতিবেদন রয়টার্স পেয়েছে। পরে তাইওয়ানের নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সূত্র সেই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে।
তাতে বলা হচ্ছে, আজ দুপুর ১২টার দিকে তাইওয়ানের মাৎসু দ্বীপপুঞ্জের কাছেও দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে চীনের সামরিক বাহিনী। এই দ্বীপটির সঙ্গে চীনের উপকূল রয়েছে। অবশ্য কোথায় মহড়া চালাবে, সে ঘোষণা আগেই দিয়েছিল চীন। সে ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট এলাকায় গিয়ে আঘাত হেনেছে এসব ক্ষেপণাস্ত্র।
চীনের এই সামরিক মহড়াকে জাতিসংঘের নিয়মের লঙ্ঘন, তাইওয়ানের সীমানায় আগ্রাসন এবং মুক্ত সমুদ্র ও আকাশসীমার জন্য সরাসরি হুমকি বলে অভিহিত করেছেন তাইওয়ানের কর্মকর্তারা। তাইওয়ানের ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টিও চীনের এই সামরিক মহড়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে। দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যস্ত একটি আন্তর্জাতিক জল ও আকাশসীমায় মহড়া চালাচ্ছে চীন। একে বেইজিংয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অবৈধ আচরণ বলে অভিহিত করেছে দলটি।
এদিকে বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের মহড়া শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে সংযম ধরণের আহ্বান জানিয়েছে আসিয়ান। বর্তমানে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে চলমান আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে আসিয়ান নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এ ঘটনায় সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।