জাপানে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজের সুস্থ যাত্রীরা অবশেষে মুক্ত হচ্ছেন। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় যাঁদের ফল নেগেটিভ এসেছে, তাঁরা আজ বুধবার জাহাজ ছাড়ার অনুমতি পেয়েছেন। ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে জাহাজটিতে কোয়ারেন্টাইন (রোগ সংক্রমণের আশঙ্কায় পৃথক রাখা) করে রাখা হয় ৩ হাজার ৭০০ যাত্রীকে।
জাহাজ থেকে হংকংয়ে নেমে যাওয়া এক যাত্রীর করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ ধরা পড়ার পর জাহাজটিকে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়। এরপর জাহাজে একের পর এক ব্যক্তি আক্রান্ত হতে থাকেন। চীনের বাইরে এই জাহাজে সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, জাহাজটিতে এখন কমপক্ষে ৫৪২ জন কোভিড-১৯ রোগী রয়েছেন। জাহাজটিতে কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাপানের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির মধ্যে যাত্রীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত মানুষের সংখ্যা এখন দুই হাজার ছুঁই ছুঁই। আর সংক্রমিত হয়েছেন ৭৪ হাজারের বেশি মানুষ। চীনের বাইরে ২৪টি দেশে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেগেটিভ ফল আসা পাঁচ শর মতো যাত্রীকে জাহাজ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন তাঁদের স্বপ্নের নৌযাত্রাকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করেছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জানালাবিহীন কেবিনে আটকে থাকতে থাকতে একঘেয়েমিতে ভুগেছেন অনেকে।
জাহাজের ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন ইয়ার্ডলি অং নামে এক যাত্রী। পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসার পর তিনি আবেগ-আপ্লুত হয়ে টুইটারে লেখেন, ‘নেগেটিভ! আমি, ছেলে, স্বামী, মা এবং বাবা! ধন্যবাদ ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করার জন্য...এত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছি এখন।’
যাঁদের কোনো লক্ষণ ছিল না এবং পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে, তাঁদের কর্মকর্তাদের তরফ থেকে একটি সনদ দেওয়া হচ্ছে। সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এনকভে সংক্রমণের ঝুঁকি নেই, এই ব্যক্তির সংক্রমণের সময়ে জ্বরসহ অন্য কোনো লক্ষণ ছিল না।’
তবে সবাই ইয়ার্ডলির মতো ভাগ্যবান নয়। ব্রিটিশ যাত্রী ডেভিড আবেল এবং তাঁর স্ত্রী স্যালির পজিটিভ এসেছে পরীক্ষার ফল।
ডায়মন্ড প্রিন্সেসের সুস্থ যাত্রীদের তিন দিনের মধ্যে জাহাজ ছাড়ার প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে। কারণ, এখনো বেশ কিছু পরীক্ষার ফলাফল আসা বাকি রয়েছে। সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে যিনি এসেছেন, তাঁকেই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে যেতে হবে। সবশেষ যাত্রী নেমে যাওয়ার পর ক্রুদের নতুন করে কোয়ারেন্টাইন শুরু হবে। তবে ভাইরাসের আশঙ্কা থাকলেও জাহাজ থেকে সুস্থ ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন ইয়োকোহামাবাসী।
৫১ বছর বয়সী ইসামু হাবিরো বলেন, ‘আমি নিশ্চিত জাহাজে থাকা ব্যক্তিরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। আশা করি, তাঁরা শিগগিরই তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইয়োকোহামার বাসিন্দা হিসেবে আমি চাই না তাঁদের প্রতি বিরূপ আচরণ করা হোক। আমি তাঁদের জন্য উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে চাই।’
এর আগে জাহাজের সুস্থ মার্কিন যাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার জাপানের রাজধানী টোকিওর হানেদা বিমানবন্দর থেকে মার্কিন সরকারের দুটি বিমানে করে যাত্রীদের নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাজটিতে ৪০০ জন মার্কিন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছে ৪০ জন মার্কিন নাগরিক। তাঁদের জাপানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।