হামলায় ৮০ 'মার্কিন সন্ত্রাসী' নিহত: ইরান

ইরাকে মার্কিন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বিস্ফোরণ। ছবি: রয়টার্স
ইরাকে মার্কিন বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর বিস্ফোরণ। ছবি: রয়টার্স

ইরাকে মার্কিন দুটি ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৮০ জন ‘মার্কিন সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। এতে আরও দাবি করা হয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মার্কিন হেলিকপ্টার ও সামরিক সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ তথ্যের উৎস সম্পর্কে কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি তারা।

এই হামলার মাধ্যমে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের কুদস বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার জবাব দেওয়া হয়েছে এবং আর যুদ্ধ চায় না বলে জানিয়েছে ইরান।

স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে ইরাকের ওই দুটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে এক ডজনেরও বেশি ‘ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ ছুড়েছে ইরান। গত শুক্রবার ইরাকের বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানি জেনারেল কাশেম সোলাইমানি নিহত হন। সোলাইমানির বাহিনী মার্কিনদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল, এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয় বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি দেশটি। সোলাইমানি হত্যার ঘটনায় ইরান চরম প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেয়।

আজ বুধবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মানি, ডেনমার্ক ও নরওয়ে জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ইরাকে দুই মার্কিন বিমানঘাঁটিতে রকেট হামলা চালিয়েছে ইরান। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ইরানি টেলিভিশন জানায়, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলাটি ছিল ‘সবচেয়ে দুর্বল’। আরেকটি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিভিশনটি জানায়, ইরানের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে আরও ১০০টি সম্ভাব্য স্থান রয়েছে।

ইরান টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘তাঁর (কাশেম সোলাইমানি) হত্যার প্রতিশোধ নেওয়া হয়েছে। এখন তিনি শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন।’ গত শুক্রবার যে সময়ে সোলাইমানির ওপর মার্কিন ড্রোন হামলা চালানো হয়, ঠিক একই সময়ে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। নিজের শহর কেরমানে শহীদদের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইরানের জাতীয় এই বীরকে সমাহিত করা হয়েছে।

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জনাথন হফম্যান বলেছেন, ইরাকে যে দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে আল-আসাদ ও ইরবিল। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনা, অংশীদার ও সহযোগীদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইরাকে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা রয়েছে। জার্মানি জানিয়েছে, তাদের ১১৫ জনের মতো সেনা ইরবিলে রয়েছে। তারা সবাই ভালো আছে। ডেনমার্ক জানিয়েছে, ইরাকে তাদের ১৩০ জনের মতো সেনা রয়েছে। আল-আসাদ ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো সেনা নিহত হয়নি, আহতও হয়নি। নরওয়ে জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তাদের কোনো সেনাও হতাহত হয়নি। আল–আসাদ ঘাঁটিতে তাদের ৭০ জনের মতো সেনা রয়েছে।

ছবি: রয়টার্স

এর আগে পেন্টাগনে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপের বলেন, যেকোনো উপায়ে বা আকারে ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা চালাবে বলে তাঁদের ধারণা ছিল।

হামলার পর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ ইরান আর যুদ্ধ বা উত্তেজনা চায় না বলে টুইটে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর যে ঘাঁটি থেকে কাপুরুষোচিত সশস্ত্র হামলা করা হয়েছে, জাতিসংঘ সনদের ৫১ অনুচ্ছেদ অনুসারে আত্মরক্ষায় ইরান সেখানে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে এর (ঘটনার) সমাপ্তি টেনেছে। আমরা যুদ্ধ বা উত্তেজনা বাড়াতে চাই না, তবে যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করব।’

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ । ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, স্থানীয় সময় বুধবার সকালে তিনি এ নিয়ে বিবৃতি দেবেন। তিনি বলেন, ‘সব ঠিক আছে! ইরাকে অবস্থিত দুটি সামরিক ঘাঁটিতে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, ভালো হয়েছে! বিশ্বে এখনো আমাদেরই রয়েছে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুসজ্জিত সামরিক বাহিনী! কাল সকালে আমি বিবৃতি দেব।’

তবে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ট্রাম্পের ‘সব ঠিক আছে’ মন্তব্যের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ইরানের হামলায় ক্ষয়ক্ষতি কম দেখানোর চেষ্টা থেকে এ মন্তব্য করেছেন।

জেনারেল কাশেম সোলাইমানি। ছবি: এএফপি

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ওই অঞ্চলে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপকভাবে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদি মার্কিন সামরিক বাহিনী বিরত থাকে এবং ইরান যদি সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে আর কোনো পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ওয়াশিংটন ও তেহরান এই সংঘাতময় পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার একটি সুযোগ পেতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প । ছবি: এএফপি