হত্যার আগে ভয়াবহ নির্যাতন করা হয়েছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁর আঙুল কেটে ফেলা হয়। তুরস্ক সরকার সমর্থিত দৈনিক পত্রিকা ইয়েনি সাফাকের বরাত দিয়ে আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ইয়েনি সাফাক দাবি করেছে, তাঁরা খাসোগিকে নির্যাতন ও হত্যার সময়ের একাধিক অডিও রেকর্ড শুনেছে। নির্যাতনের পর তাঁকে হত্যা করা হয়।
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়েছে খাসোগিকে কেটে টুকরো করা হয়।
২ অক্টোবর খাসোগি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত নথিপত্র আনার প্রয়োজনে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তিনি আর বেরিয়ে আসেননি। খাসোগি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। তাঁর কলামে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করা হতো। যুবরাজ মোহাম্মদ সালমান গত বছরের জুনে ক্ষমতা নেওয়ার পর খাসোগি গ্রেপ্তার আতঙ্কে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান।
তুর্কি পুলিশের দাবি, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যা মিশনে অংশ নেয় রিয়াদ থেকে ইস্তাম্বুলে আসা ১৫ সদস্যের সৌদি স্কোয়াড। এই সদস্যের একজন সৌদি ফরেনসিক বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাহ মুহাম্মদ আল-তুবায়গি।
ওয়াশিংটন পোস্টে আগেই মার্কিন ও তুর্কি একাধিক কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে জানিয়েছে, অডিও-ভিডিও রেকর্ড থেকে বোঝা যায়, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর হত্যা করা হয়েছে। পরে তাঁকে কেটে টুকরো করা হয়।
এই প্রথম কোনো তুর্কি গণমাধ্যম দাবি করেছে যে তারা এসব টেপের কথাবার্তা ও শব্দ শুনেছে। তবে কোন উৎস থেকে কীভাবে টেপগুলো পাওয়া গেছে, এ বিষয়ে জানায়নি তারা।
এর আগে তুরস্ক সরকার সমর্থিত দৈনিক পত্রিকা সাবাহ প্রতিবেদনে বলা জয়, খাসোগির অ্যাপল ঘড়িতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। যদিও কয়েক জন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যেভাবে বলা হচ্ছে, ঠিক সেভাবে ওই ঘড়ি কোনো ঘটনা রেকর্ড করতে পারে না।
ইয়েনি সাফাকে প্রকাশিত খবর অনুসারে, একটি টেপে ইস্তাম্বুলে সৌদি আরবের কনসাল মোহাম্মদ আল-ওতায়বির কণ্ঠ শোনা গেছে। খাসোগিকে নির্যাতনের সময় তিনি বলছিলেন, ‘বাইরে গিয়ে এটা করো। তোমরা আমাকে বিপদে ফেলে দিচ্ছ’।
খবরে আরেকটি টেপের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে, অপরিচিত একজন ওতায়বিকে বলছেন, ‘সৌদি আরবে এসে বেঁচে থাকতে চাইলে চুপ থাক!’
তবে মিডল ইস্ট আই ওয়েবেসাইটে একজন তুর্কি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সেখানে খাসোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের কোনো চেষ্টা ছিল না। সৌদি দল গিয়েছিল তাঁকে হত্যা করতে। ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, হত্যায় সাত মিনিট সময় লেগেছে। সৌদি ফরেনসিক বিভাগের সালাহ মুহাম্মদ আল-তুবায়গি যখন খাসোগির দেহ কেটে টুকরো টুকরো করছিলেন ‘তখনো বেঁচে ছিলেন’খাসোগি।
বলা হচ্ছে, হত্যার সময় তুবায়গি গান শুনছিলেন।