হংকংয়ের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে চাইছে চীন। এ উদ্দেশ্যে আজ বৃহস্পতিবার একটি খসড়া সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে চীনের পার্লামেন্ট। এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে অঞ্চলটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব আরও কমবে এবং বেইজিংয়ের প্রতি সেখানকার রাজনীতিবিদদের আরও বেশি আনুগত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, নতুন এ পদক্ষেপের ফলে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম এ কেন্দ্রের ওপর চীনের ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী হস্তক্ষেপ আরও বাড়বে। এর আগে, গত বছরের জুনে হংকংয়ের ওপর জাতীয় নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দিয়েছিল বেইজিং, যেটিকে বিরোধী মতকে দমন করার হাতিয়ার হিসেবে দেখে থাকেন সমালোচকেরা।
আজ চীনের পার্লামেন্টে ২৮৯৫-০ ভোটে হংকংয়ের নির্বাচনপদ্ধতি পরিবর্তনের খসড়া আইনটি পাস হয়। ব্যাপক করতালির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান চীনা আইনপ্রণেতারা।
নতুন পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে হংকংয়ের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিরোধিতার পথ প্রায় বন্ধ হবে। কেননা এতে হংকংয়ের আইনসভার আকার ও গঠন বদলে যাবে। বেইজিংপন্থীদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাহী নির্বাচিত করবে নির্বাচক কমিটি। শহরের অনেক প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতাও এ কমিটিকে দেওয়া হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের নতুন পদ্ধতি ঠিক করা হবে।
আইনসভার সদস্যসংখ্যা ৭০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হবে এবং নির্বাচন কমিটির আকার ১ হাজার ২০০ থেকে বাড়ে দেড় হাজার হবে। বর্তমানে আইনসভার অর্ধেক সদস্য সরসরি ভোটে নির্বাচিত হন। বাকি অর্ধেক নির্বাচিত হন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন ও পেশাজীবীদের মধ্য থেকে যাঁরা প্রধানত আসেন বেইজিংপন্থীদের মধ্য থেকে। এখন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ হলে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে কারা আসবেন, তা ঠিক করে দিতে পারবে নির্বাচক কমিটি।
গণতন্ত্রের দাবিতে ২০১৯ সাল থেকে টানা বিক্ষোভ করে আসছে হংকংবাসী। যাকে চীন নিজের জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে দেখে। বিক্ষোভ দমনে চীন হংকংয়ের প্রভাবশালী অনেক গণতন্ত্রপন্থী নেতা ও অ্যাকটিভিস্টকে হয় কারাগারে পাঠিয়েছে, নয়তো নির্বাসিত করেছে।
এক বিবৃতিতে হংকংয়ে বেইজিংয়ের লিয়াজোঁ অফিস জানায়, ‘ভালো উদ্দেশ্য থেকেই কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নতুন এ পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আশা করি, সব ধরনের জনগোষ্ঠী এবং সাধারণ মানুষ আইন সংশোধনে সমর্থন দেবে। তাদের শক্তিশালী ইতিবাচক সাড়া সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে।’
পৃথক এক বিবৃতিতে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম এ খসড়া সিদ্ধান্তের প্রতি ‘কড়া সমর্থন’ দেন, সেই সঙ্গে বেইজিংয়ের প্রতি ‘আন্তরিক কৃতজ্ঞতা’ জানান। তিনি বলেন, নির্বাচনব্যবস্থা পুনর্গঠনের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরে আসবে হংকং।
এদিন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, হংকংয়ের নির্বাচনপদ্ধতি পাল্টে দিতে প্রস্তাবিত এ আইন চীনের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থাকে খাটো করে দেবে। তিনি বলেন, হংকংয়ে গণতান্ত্রিক আলোচনার জায়গা ফাঁপা করে দিতে বেইজিং সর্বশেষ এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে চীনা শাসনে অন্তর্ভুক্ত হয় হংকং। তখন থেকে হংকং ‘এক দেশ, দুই নীতি’ পদ্ধতির আওতায় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। হংকং চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলেও নিজস্ব বিচার বিভাগ, আইনসভা ও নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে।