ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে হংকংয়ের চীনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ২৩ বছর পূর্তি ছিল গতকাল বুধবার। দিনটি মহাসমারোহে পালন করা দূরে থাক, হংকংবাসীর জন্য নতুন বেদনা নিয়ে হাজির হয়েছে। সেই বেদনার কারণ হলো চীনের আরোপিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা আইন, যা ইতিমধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে। সিএনএনের বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়।
অনেকটা গোপনে ওই আইন প্রণয়ন করল বেইজিং। গত মে মাসে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর হংকংয়ের কারোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়ায় ওই মাসেই চীন এ-সংক্রান্ত একটি বিল দেশটির পার্লামেন্টে তোলে। ২৮ মে বড় ব্যবধানে পাস হয় বিলটি। কোনো কাটাছেঁড়া বা পরিবর্তন ছাড়াই গত মঙ্গলবার বিলটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় পার্লামেন্টের সংসদীয় কমিটি। গতকাল বুধবার প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বিলে সই করলে তা আইনে পরিণত হয়। আইনটি নিয়ে সারা বিশ্বেই বিতর্ক চর্চিত হচ্ছে। পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এই আইনের কারণেই চীনকে একটি আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থীরা বলছেন, হংকংবাসীর যে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসন অবশিষ্ট ছিল, সেটাও ধূলিসাৎ করে দেবে আইনটি।
আইনটিতে যেসব কথা উল্লেখ আছে, তা আসলেই উদ্বেগজনক। সেখানে বলা হয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদ, কেন্দ্রীয় সরকার পতন, সন্ত্রাসবাদ ও জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে বিদেশি বাহিনীর সঙ্গে আঁতাতমূলক যেকোনো কাজ শাস্তিমূলক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, হংকংয়ের আইনসভাকে পাশ কাটিয়ে যেকোনো নিরাপত্তাসংক্রান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এ আইনে। তাই কেউ স্বাধীনতার আওয়াজ তুললেই এই আইন দিয়ে তাঁকে পাঠানো হবে লাল দালানে।
হংকংয়ে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে, যার উপদেষ্টা নিয়োগ দেবে বেইজিং। হংকংয়ের কোনো নাগরিক চীনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, চীনের পতাকাকে অবমাননা করছেন, স্বাধীনতা চাইছেন, তাঁদের খুঁজে খুঁজে বের করার দায়িত্ব থাকবে ওই জাতীয় কমিটির ওপর। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিচারের জন্য বিচারকদের নতুন প্যানেল গঠনের কথা বলা হয়েছে। এখন আবার চীনের কর্মকর্তারা বলাবলি করছেন, হংকংয়ের সন্দেহভাজন আসামিকে চীনে নিয়ে বিচারও করার সুযোগ পাওয়া যাবে নতুন আইনের বদৌলতে। অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি হবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এর মানে হচ্ছে, বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্র হংকং সরাসরি চলে যাবে চীনের নিয়ন্ত্রণে। আইনের প্রভাব ইতিমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। গণতন্ত্রের পক্ষে যারা সোচ্চার ছিল, এমন বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ভেঙে ফেলা হয়েছে। দোকানে ঢুকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ আর পোস্ট দিচ্ছেন না। অনেকে অ্যাকাউন্ট মুছে দিচ্ছেন। অনেকে আবার পুরোনো পোস্ট মুছে দিচ্ছেন নিরাপত্তা বাহিনীর খড়গ থেকে বাঁচার জন্য।
সামনের দিনগুলোতে নিরাপত্তা আইনের অজুহাতে হংকংয়ে ধরপাকড় অব্যাহত থাকবে। ‘বিক্ষোভের শহর’ হিসেবে পরিচিত হংকংয়ের মানুষ রাজপথে এসে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে ভয় পাবেন। ফলে সারা জীবনের জন্য ভিন্ন কাঠামোর শহরে পরিণত হবে হংকং। বিরোধীরা অবশ্যই একে নিষিদ্ধ পুলিশি রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেছেন।