বিগত ১০০ বছরে বিজ্ঞানে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। এই ১০০ বছরের মধ্যে দুটি মহামারি প্রত্যক্ষ করেছে বিশ্ব। এর একটি হলো ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু। আরেকটি চলতি সময়ে করোনাভাইরাসের মহামারি বা কোভিড-১৯ রোগ। এই সময়ের মধ্যে মানুষ ভাইরাস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছে। বিভিন্ন ভাইরাসের টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। তাৎক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যম তৈরি হয়েছে, তৈরি হয়েছে বিস্তৃত জনস্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর মানুষ আবারও মাস্ক ব্যবহার করতে শুরু করেছে। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ মারা যাওয়ার আগে এমন একটি সংক্রামক ব্যাধি থেকে মুক্তি এখনো মেলেনি। সেই ১৯১৮ সালের মতো মানুষ এখনো ফাঁকা বুলি শুনছে। বিশ্বজুড়ে হাসপাতালগুলো ভরে উঠেছে রোগীতে, মর্গগুলো ভরে গেছে লাশে। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যাচ্ছে মানুষের সঞ্চয়। কোয়ারেন্টিনের মতো সেই প্রাচীন জ্ঞানকে আবার কাজে লাগাতে হচ্ছে। হাতুড়ে বৈদ্যগিরি ফিরে এসেছে। আপনার শিরা কীভাবে জীবাণুমুক্ত করা হতে পারে, তা নিয়েও কথা হচ্ছে। এমন অসম্ভব কথা বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাসির পাত্র হয়েছেন।
১৯১৮ সালেও স্প্যানিশ ফ্লুর কোনো টিকা ছিল না। ছিল না কোনো চিকিৎসা। ফলে ওই মহামারি পুরো বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়ায়। এই ফ্লুতে মারা গিয়েছিল ৫ কোটি মানুষ। ঠিক করোনাভাইরাসের মহামারি যখন চলছে, তখনো টিকা কিংবা চিকিৎসাপদ্ধতির কোনোটাই আবিষ্কৃত হয়নি।
তবে বিজ্ঞানের কল্যাণে বেশ কিছু অগ্রগতি হয়েছে। কারণ, নতুন এই করোনাভাইরাসটি দ্রুত চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে। এ ছাড়া এই ভাইরাসের জেনেটিক কোড, সংক্রমণ পরীক্ষাপদ্ধতি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে দ্রুত। যেটার কোনোটি ১৯১৮ সালে মানুষের কাছে ছিল না। ফলে মানুষে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি সুযোগ পেয়েছে। দেশগুলো দ্রুত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এই ভাইরাসের সংক্রমণ এড়িয়ে সুস্থ থাকা বা অসুস্থ হলে কী করা যেতে পারে—সেই পদ্ধতি এখনো অনাবিষ্কৃত।
দ্য গ্রেট ইনফ্লুয়েঞ্জা বইয়ের লেখক জন এম ব্যারি বলছেন, ১৯৮১ সালেও প্রাণীর শরীর থেকেই মানুষের শরীরে ছড়িয়েছিল স্প্যানিশ ফ্লু। এর বিস্তারও হয়েছিল একইভাবে। করোনার মতো এর ধরনও একই রকম ছিল।