আরব বসন্তের এক র্যালির নেতৃত্ব দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হতে যাওয়া মুর্তজা কুরেইরিসকে মুক্তি দিতে সৌদি আরবের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সৌদি কারাগারে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে রাখা হয়েছে মুর্তাজা কুরেইরিসকে। তাঁর ফাঁসি কার্যকর হলে সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী কারও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে।
মুর্তজাকে সৌদির দাম্মাম শহরের পূর্বে অবস্থিত একটি কিশোর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আটকের পর চার বছরের মধ্যে তাঁর সঙ্গে কোনো আইনজীবীর দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, আটকের পর কুরেইরিসের ওপর চরম নির্যাতন চালানো হয়। তাঁকে মিথ্যা প্রলোভন দেখানো হয় যে, যদি তিনি নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন, তবে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি সরকার।
২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় উত্তাল ছিল কয়েকটি দেশ। সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে ওই সময় দেশজুড়ে বিক্ষোভ হয়। এরই অংশ হিসেবে মুর্তাজা কুরেইরিস বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল নিয়ে রাজপথে নামেন। ৩০ জন বন্ধুর দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মুর্তাজা কুরেইরিস। ওই র্যালি শেষে তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘সৌদিতে সবাই মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত দেখতে চায়।’ মুর্তাজা কুরেইরিসের দুঃসাহস সৌদি কর্তৃপক্ষের নজর এড়ায়নি। এ ঘটনার ৩ বছর পর মুর্তাজা কুরেইরিসকে বাহরাইন সীমান্তে গ্রেপ্তার করে সৌদি আরব। ওই দিন পরিবারের সঙ্গে সৌদি ছেড়ে প্রতিবেশী বাহরাইনে পালিয়ে যাচ্ছিলেন মুর্তাজা।
মুর্তাজা কুরেইরিসের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের অভিযোগ, ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় সৌদিতে গণতন্ত্রের দাবিতে বন্ধুবান্ধব জড়ো করে বিক্ষোভে নেমেছিলেন মুর্তাজা। এক সাইকেল র্যালিতে অংশ নিয়ে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলেন তাঁরা। মুর্তাজা কুরেইরিস ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ নিয়ন্ত্রণ করছেন, যে অপরাধের শাস্তি শিরশ্ছেদ বা ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মুর্তাজার ভাই আলী কুরেইরিস মোটরসাইকেলে করে সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় শহর আওয়ামিয়ার এক থানায় পেট্রলবোমা ছুড়ে মারেন। সে সময় তাঁর সঙ্গে মুর্তাজাও ছিলেন। এ ঘটনার ৩ বছর পর মুর্তাজা কুরেইরিসকে বাহরাইন সীমান্তে গ্রেপ্তার করে সৌদি আরব। ওই দিন পরিবারের সঙ্গে সৌদি ছেড়ে প্রতিবেশী বাহরাইনে পালিয়ে যাচ্ছিলেন মুর্তাজা।
এ ছাড়া বিক্ষোভের সময় সহিংসতা, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পেট্রলবোমা হামলায় সহযোগিতা, ভাইয়ের জানাজার সময় পদযাত্রা বের করার অভিযোগও আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় মুর্তাজা কুরেইরিসের বড় ভাই আলী কুরেইরিসকে ২০১২ সালে হত্যা করে সৌদি আরবের পুলিশ। জোর করে কুরেইরিসের কাছ থেকে অপরাধের স্বীকারোক্তি সৌদি সরকার আদায় করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরব প্রায় ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।
আরব বসন্তের ঘটনায় যদি সৌদি কর্তৃপক্ষ কুরেইরিসকে ফাঁসির দণ্ড দেয়, তাহলে তিনি হবেন ২০১৯ সালে সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া চতুর্থ তরুণ, যাঁদের বয়স ১৯-এর ঘরে। এপ্রিলে বাকি তিনজনকে (৩০ জনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া) একই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তথ্যসূত্র: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, সিএনএন, আল জাজিরা।