সৌদি আরবে আজ রোববার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। সকালে মক্কার মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা হজের ফরজ। এই ময়দানে নামিরা মসজিদ থেকে হজের খুতবা দেওয়া হয়। নিয়ম হচ্ছে, কেউ মসজিদের জামাতে শামিল হতে না পারলে নিজ নিজ তাঁবুতেই জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করবেন। তবে সে ক্ষেত্রে জোহর ও আসরের নামাজ একত্রে না পড়ে জোহর ও আসরের ওয়াক্তে আলাদা আলাদাভাবে পড়তে হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে আরাফাতে বৃষ্টি শুরু হয়। ওই এলাকায় সচরাচর বৃষ্টি হয় না, তাই আরবের হাজিরা আনন্দ নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজেছেন। হাজিদের পরবর্তী কাজ সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার উদ্দেশে রওনা দেওয়া।
মাগরিব ও এশার নামাজ হাজিরা একসঙ্গে আদায় করেন। আরাফাতের ময়দানে অথবা আরাফাত থেকে মুজদালিফা যাওয়ার পথে মাগরিবের নামাজের সময় হলেও নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। মুজদালিফাতে পৌঁছানোর পর মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে পড়তে হয়। মুজদালিফার খোলা প্রান্তরের খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়। কারণ, এই মুজদালিফায় হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) মুজদালিফার প্রান্তরে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটান।
এই মাঠেও কিছু দূর পরপর বাথরুম রয়েছে। সারা রাতই বাথরুমগুলোর সামনে লম্বা লাইন লেগে থাকে। নামাজ শেষে হাজিরা আশপাশ থেকে ছোট ছোট পাথর সংগ্রহ করেন। জামারায় শয়তানের উদ্দেশে পরপর তিন দিন ছোড়ার জন্য প্রয়োজনীয় পাথরের টুকরা এখান থেকেই সংগ্রহ করতে হয়। ৭০টি পাথর সংগ্রহ করার পর হাজিরা বিশ্রাম নেন।
মুজদালিফায় অবস্থান করা ওয়াজিব। হাজিরা ফজরের নামাজ শেষে দোয়া-দরুদ পড়ে সূর্যোদয়ের কিছু আগে মিনার উদ্দেশে রওনা দেন। আরাফাত ময়দানটি মিনা থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। তাঁবুতে পৌঁছে বিশ্রাম ও নাশতা সেরে নেন হাজিরা। বড় জামারায় গিয়ে শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ করেন। জামারা হলো মিনা ময়দানে অবস্থিত তিনটি স্তম্ভ। এগুলোর নাম জামারাতুল উলা বা ছোট জামারাহ, জামারাতুল উসতা বা মধ্যম জামারাহ এবং জামারাতুল কুবরা বা বড় জামারাহ।
পাথর নিক্ষেপের পরবর্তী কাজ হলো কোরবানি করা। হাজিরা যেহেতু আগেই কোরবানির টাকা নির্ধারিত ব্যাংকে জমা দিয়েছেন, তাই তাঁদের আর কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানে যেতে হয় না। হাজিরা জামারাহ থেকে বেরিয়ে মাথা মুণ্ডন করার জন্য নাপিতের দোকানের খোঁজ করেন। কোনো কোনো জায়গায় কিছু হজযাত্রী পয়সার বিনিময়ে অন্য হজযাত্রীদের মাথা মুণ্ডন করে দেন।
১০ জিলহজ তাওয়াফে জিয়ারত করার জন্য মক্কার পথে রওনা হন হাজিরা। এটি হজের অন্যতম ফরজ কাজ। কাবা শরিফের তাওয়াফ শুরু করতে হয় হাজরে আসওয়াদ থেকে। ভিড়ের কারণে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ বা চুমু দেওয়া সম্ভব না হলে ইশারায় চুমু দিতে হয়। সেখানে প্রচণ্ড ভিড়। আগে যেখানে হাজিদের তাওয়াফ ১৫ মিনিটের মধ্যে হয়ে যেত, সেখানে আজ হাজিদের তাওয়াফ করতে লাগল দুই ঘণ্টা। আর সায়ি (সাফা-মারওয়া সাতবার আসা-যাওয়া করা) করতে লাগল আরও ২ ঘণ্টা। এখান থেকে আবার জামারাতে যেতে হবে পাথর ছোড়ার জন্য।
মসজিদুল হারামের চত্বরের একপ্রান্ত থেকে একটা পায়ে চলা পথ জামারার দিকে চলে গেছে। রাস্তাটির বেশির ভাগ অংশই পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা টানেল। এই রাস্তার নাম আল রাহমাহ স্ট্রিট বা সহজে চেনার জন্য পায়ে হাঁটার পথ। টানেলের ভেতর পর্যাপ্ত আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা আছে। মাথার ওপর বিশাল সাইজের ফ্যানগুলো থেকে বিকট শব্দে বাতাস ছাড়া হচ্ছে। এই টানেল দিয়ে হাঁটার সময় একটু ভয় ভয় লাগা অস্বাভাবিক নয়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে এক এক করে ছোট, মধ্যম ও বড় জামারায় সাতটি করে পাথর নিক্ষেপ করলাম।
হাজিরা মিনায় দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করবেন। মিনার কাজ শেষে আবার মক্কায় বিদায়ী তাওয়াফ করার পর নিজ নিজ দেশে ফিরবেন। যাঁরা মদিনায় যাননি, তাঁরা মদিনায় যাবেন। যদিও মদিনায় যাওয়া হজের অংশ নয়।
প্রতিদিন হাজিদের ছবি, মৃত হাজির তালিকা ও বুলেটিনে তথ্য হালনাগাদ করা হয় http://www.hajj.gov.bd এই ঠিকানায়।