উপসাগরীয় অঞ্চলে কৌশলগত দিক থেকে হরমুজ প্রণালি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রণালি নিয়ে ইরানের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এর মধ্যে মিত্র সৌদি আরবে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০০৩ সালের পর প্রথমবারের মতো মার্কিন সেনারা সৌদিতে ঘাঁটি গাড়তে চলেছেন। অশান্ত উপসাগরীয় অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ বলে দাবি করেছে রিয়াদ ও ওয়াশিংটন। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরানের সঙ্গে নতুন করে যুদ্ধে জড়ানোর পাঁয়তারা করছে যুক্তরাষ্ট্র।
সৌদি আরবে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রিয়াদ এবং মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু এলাকায় নিয়োজিত মার্কিন সেনাবাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ড বা সেন্টকম। তারা বলেছে, ‘অতিরিক্ত শক্তিবৃদ্ধি এবং আসন্ন ও বিশ্বাসযোগ্য হুমকি থেকে উপসাগরীয় অঞ্চলটিতে আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই সেনা মোতায়েন।’ আর সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছেন।’
সৌদিতে কতজন মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে, তা না জানালেও মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, রিয়াদের দক্ষিণে প্রিন্স সুলতান সামরিক ঘাঁটিতে ৫০০ সেনা মোতায়েন করা হবে। গত বৃহস্পতিবার প্রিন্স সুলতান বিমানঘাঁটি পরিদর্শনে যান সেন্টকমের প্রধান কেনেথ ম্যাকেঞ্জি। এ সময় তিনি ঘোষণা দেন, কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ উপসাগরের জলসীমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁরা সবকিছুই করবেন।
ইরাক ১৯৯১ সালে কুয়েত আক্রমণ করলে তাদের প্রতিহত করতে এই বিমানঘাঁটিতেই শত শত মার্কিন সেনা ও যুদ্ধবিমান ঘাঁটি গেড়েছিল। ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের শাসনের সমাপ্তি ঘটাতে এটা খুবই কাজে দিয়েছিল।
যুক্তরাজ্যের কিং কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক আদ্রেয়াস ক্রেগ মনে করেন, মার্কিন প্রশাসন ইরানে সামরিক অভিযানকে বিকল্প হিসেবে ধরে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধলে এই ৫০০ সেনা তেমন বড় সংখ্যা বলে মনে হবে না। তবে আকাশ প্রতিরক্ষার বিষয়ে সহায়তার জন্য এই সংখ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সিঙ্গাপুরের রাজারত্ন স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক জেমস ডোরসি বলেছেন, ‘সৌদি বলছে, যদি তোমরা আমাদের আঘাত করো, আমরাও তোমাদের আঘাত করব। মার্কিনরা বলতে চাইছে, আমরা তোমাদের (সৌদি আরব) সঙ্গে আছি।’
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে করা ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে গত বছরের মে মাসে বেরিয়ে যাওয়ার পর তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ নিয়ে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।