সামাজ সংস্কারে আরও এগোল সৌদি আরব। বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে নতুন এক আদেশ জারি করেছে সৌদির বিচার মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি নিম্ন আদালতের উদ্দেশে ওই আদেশ জারি করা হয়। আদেশে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম বয়সী নারী বা পুরুষের বিয়ে দেওয়া ঠিক হবে কি না, তা নির্ধারণ করবেন দেশটির বিশেষ আদালত।
সৌদি আরবের আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শেখ ওয়ালিদ আল সামানি এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে বলা হয়েছে, ১৮ বছরের কম নারী বা পুরুষ কেউ বিয়ের আবেদন করলেই তার অনুমোদন দিতে পারবেন না নিম্ন আদালত। ওই আবেদনটি সরাসরি বিশেষ আদালতে পাঠাতে হবে। ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক নারী বা পুরুষের বিষয়ে দেওয়া ঠিক হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবেন ওই আদালত।
দুই বছর আগে যুবরাজ হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ বিন সালমান। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সৌদি আরবের বিশাল অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেন তিনি। ২০১৮ সালে তিনি নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। মাঠে পুরুষের সঙ্গে বসে খেলা দেখা, সিনেমা দেখার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাতিল করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া, চাকরিতে যোগদান, এমনকি অস্ত্রোপচার করার জন্য নারীদের পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হতো। সেই বিধিও বিলোপ করা হয়েছে সম্প্রতি। শত শত বছর ধরে এসব বিধিনিষেধের গ্যাঁড়াকলে ছিলেন গোঁড়া রক্ষণশীল ওই রাষ্ট্রের নারীরা। এ ছাড়া আরও অনেক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয় পর্যায়ক্রমে। এবার বাল্যবিবাহ রুখতে পদক্ষেপ নেওয়া হলো।
গত জানুয়ারিতে শিশু রক্ষা সংশোধনী আইন পাস হয় সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিলে। নতুন ওই আইনে ১৫ বছরের কম বয়সীদের বিয়ে পুরোপুরি নিষিদ্ধ এবং যাঁদের বয়স ১৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে, তাদের বিষয়ে নতুন নিয়ম চালু করা। আর সেই নতুন নিয়ম হলো বিশেষ আদালত এখন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
ওই আইনটি পাসের পর সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিলের সদস্য লতিফা আল শালান এটাকে ‘খুব ভালো পদক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করেন। একই সঙ্গে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যে লক্ষ্য নিয়ে আইনটি পাস করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা সহজ কোনো বিষয় নয়।
ইশা আল গেইথ নামের আরেক শুরা সদস্য ওই আইনের প্রশংসা করেন।
সৌদিতে শুধু মেয়েরাই নয়, ছেলেরাও বাল্যবিবাহের শিকার হয়। শিশু অধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, মেয়েরা সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহের শিকার। তারা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। স্বাস্থ্যসেবা পায় না। দারিদ্র্যের কশাঘাত ও সংঘাতের মধ্যে তাদের জীবন ঘুরপাক খায়। সৌদি আরবে সাতজনের মধ্যে একজন মেয়ের ১৮ বছরের কম বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। নতুন আদেশ বাল্যবিবাহ ঠেকাতে কাজে দেবে।