সোলাইমানির খুনিরা বিশ্বের কোথাও নিরাপদে থাকতে পারবে না

নিহত কাসেম সোলাইমানি।
 ছবি: এএফপি

কাশেম সোলাইমানির খুনিরা পৃথিবীর কোথাও নিরাপদে থাকতে পারবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের বিচার বিভাগীয় প্রধান ইব্রাহিম রাইসি। দেশটির সামরিক কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি হত্যার প্রথম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে ইব্রাহিম রাইসি বলেন, হত্যার নির্দেশদাতা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বিচারের আওতার বাইরে থাকবেন না।

ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরে গত বছরের ৩ জানুয়ারি মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন কাশেম সোলাইমানি। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলে আসা উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।

রাইসি বলেন, তারা কঠোর প্রতিশোধ দেখবে। এত দিন তারা যা দেখে এসেছে, তা এর ঝলকমাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলে যে কেউ খুন বা খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে বিচারের হাত থেকে বেঁচে যাবেন, তা ভাববেন না। যাদেরই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে এবং অপরাধ করেছে, তারা পৃথিবীতে নিরাপদ নয়।

অনুষ্ঠানে ইরানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা ছাড়াও দেশটির আঞ্চলিক মিত্র দেশ ও মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ তালিকায় রয়েছে সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও ইয়েমেন।

জেনারেল সোলাইমানি নিজ দেশ ইরানে হাজি কাশেম নামে পরিচিত। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার হলেও অলিখিতভাবে তাঁর পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে ছিল। রেভল্যুশনারি গার্ডের ‘কুদস ফোর্স’ সোলাইমানির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছিল। ২১-২২ বছর ধরে বাহিনীটি গড়ে তোলেন তিনি।

কাসেম সোলাইমানি।

‘কুদস ফোর্স’ অপ্রচলিত যুদ্ধের জন্য তৈরি একটা বৃহৎ ‘স্পেশাল অপারেশন ইউনিট’। এই ফোর্সের প্রধান কর্মক্ষেত্র মূলত ইরানের বাইরে। কুদস ফোর্স ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন সোলাইমানি। সোলাইমানি তাঁর বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন। খামেনি জেনারেল সোলাইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দেন। বিপ্লবোত্তর ইরানে এই খেতাব তিনিই প্রথম পান।

সোলাইমানিকে হত্যার ঘটনার পর খামেনিসহ ইরানের শীর্ষ নেতারা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির মুখোমুখি করার কথা বলেন।

সোলাইমানির উত্তরসূরি ইসমাইল কানি শুক্রবারের অনুষ্ঠানে সতর্ক করে বলেছেন, প্রতিশোধ যেকোনো জায়গা থেকে আসতে পারে। তিনি বলেন, এমন হতে পারে, ঘরের ভেতরের লোকই অপরাধের জন্য প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

২০১৮ সাল থেকে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছায় যুক্তরাষ্ট্র। ছয় জাতি চুক্তি হিসেবে পরিচিত এ চুক্তিতে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া রয়েছে রাশিয়া, চীন, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি।

২০১৮ সালের মে মাসে ট্রাম্প এই পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান এবং ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞার পথ বেছে নিলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। ২০১৯ সালের জুন থেকে দুই দেশ দুবার যুদ্ধের কাছাকাছি চলে এসেছিল।