চীনের যে উহান থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে ধরা হয়, সেখানেই কনস্যুলেট অফিস খোলার কথা ভাবছে জাপান। দেশটির বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাগরিকদের সেবা প্রদানের জন্য এ অফিস খোলা হবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই গত সপ্তাহে জাপান সফর করেন। তিনি জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিৎসু মোতেগির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। তাঁদের আলোচনায় উহানে কনস্যুলেটের বিষয়টি উত্থাপন করেন মোতেগি।
বেইজিংয়ে দূতাবাস ছাড়াও সাংহাই এবং চংচিংয়ে জাপানের কনস্যুলেট কার্যালয় রয়েছে। এই তিন শহর থেকে অনেকটাই দূরে উহানের অবস্থান। জাপান এখন চাইছে কাজের সূত্রে সেখানে অবস্থানরত জাপানি নাগরিকদের কনস্যুলেট সেবা সহজ করতে।
উহানভিত্তিক বিদেশি বিভিন্ন শিল্প খাত চীন ছেড়ে অন্য কোনো দেশে চলে যাওয়ার আশঙ্কা তেমন নেই। এখানে উৎপাদিত পণ্যের প্রায় সবটাই চীনের বাজার লক্ষ্য ধরে তৈরি করা হয়। এ কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর পরিষদ দল মার্কিন কনস্যুলেট কার্যালয় গুটিয়ে নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়া উহানে কনস্যুলেট কার্যালয় চালু রেখেছে।
উহান চীনের একটি প্রধান মোটর গাড়ি উৎপাদন কেন্দ্র। হোন্ডা ও নিশান মোটরসহ ১৫০টির বেশি জাপানি কোম্পানির কার্যালয় সেখানে আছে। করোনাভাইরাস মহামারির আগে প্রায় ৭০০ জাপানি নাগরিক উহানে বসবাস করছিলেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে সবাই দেশে চলে আসেন। তাঁরা আবার উহানে ফিরে যেতে শুরু করেছেন।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরকে করোনার উৎপত্তিস্থল হিসেবে মনে করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও করোনাভাইরাসকে উহান ভাইরাস ও চীনা ভাইরাস বলে থাকেন।
গত বছর ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। এরপর সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। তবে এখনো করোনার উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক চলছে।
পশ্চিমের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই চীনের গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেওয়ার তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করেন। এমনকি জাপানের একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানীর উদ্ধৃতি দিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব তথ্য ছাড়ানো হয়। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে জাপানি বিজ্ঞানীকে শেষ পর্যন্ত একটি বিবৃতি দিয়ে বলতে হয়েছে যে সে রকম কোনো মন্তব্য তিনি কখনো করেননি।
ভাইরাস কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে তা নিয়ে বিতর্ক এবং দ্বিমত থেকে গেলেও উহানে যে রোগের যাত্রা শুরু, সেটা কেউ অস্বীকার করছেন না, এমনকি চীনের প্রশাসনও নয়। করোনা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে অনেক দেশ নাগরিকদের সরিয়ে নিতে শুরু করে। চীনের কর্তৃপক্ষ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মার্চ মাসে কর্তৃপক্ষ উহানে এক মাসের জন্য কঠোর লকডাউন কার্যকর করে। ব্যাপক পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। এসব পদক্ষেপের ফলে উহানের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে।