পানির নিচে অগ্ন্যুৎপাত থেকে সৃষ্ট সুনামিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ টোঙ্গা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার সুনামিতে ভেসে যাওয়া ব্রিটিশ এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই নারীর ভাই এক বিবৃতিতে এ খবর জানিয়েছেন। খবর বিবিসি ও এএফপির
স্থানীয় সময় গত শুক্রবার টোঙ্গায় পানির নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সুনামিতে নিহত ওই ব্রিটিশ নারীর নাম অ্যাঙ্গেলা গ্লোভার। তাঁর বয়স ৫০ বছর। তিনি নিরাশ্রয় পশুর জন্য দাতব্য সংস্থা পরিচালনা করতেন। সুনামির পর থেকে ওই নারী নিখোঁজ ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন তাঁর স্বামী।
অ্যাঙ্গেলা গ্লোভারের ভাই নিক এলিনি বলেন, বোনের মরদেহ উদ্ধারের খবর তিনি পেয়েছেন। অ্যাঙ্গেলার স্বামী জেমস গ্লোভার ট্যাটুর দোকান চালাতেন। তিনিও পরিবারকে অ্যাঙ্গেলার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। টোঙ্গার প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাতাপুতে বোন ও বোনের স্বামী আটকে ছিলেন বলে এলিনির ধারণা। এলিনি বলেন, জেমস দীর্ঘ সময় একটি গাছে উঠে বসে ছিলেন। তবে অ্যাঙ্গেলা গাছে উঠতে পারেননি। কুকুরগুলোর সঙ্গে তিনিও ভেসে গেছেন।
এলিনি বলেন, তাঁর বোন টোঙ্গা অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এলিনি বলেন, যে কুকুরগুলো দেখতে সবচেয়ে খারাপ ছিল, তাদেরই বোন বেশি ভালোবাসতেন। সিডনিবাসী এলিনির ধারণা, কুকুরগুলো স্রোতে ভেসে যাওয়ার সময় বোন সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন।
অ্যাঙ্গেলা শুক্রবার ইনস্টাগ্রামে শেষ পোস্ট করেন। সেখানে তিনি সাগরে সূর্যাস্তের ছবি পোস্ট করেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমরা সুনামি সতর্কতায় রয়েছি।’
সুনামির পর টোঙ্গার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে গেছে। ইন্টারনেট কেব্ল নষ্ট হয়ে গেছে। ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে পেরুর উত্তরাঞ্চলে উঁচু ঢেউয়ের মধ্যে দুজন ডুবে গেছেন। নিখোঁজ লোকজনকে খুঁজতে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া নজরদারি ফ্লাইট পাঠিয়েছে। নিউজিল্যান্ড সরকার বলেছে, টোঙ্গার প্রধান দ্বীপ টোঙ্গাতাপুতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের ওয়েলসের বাসিন্দা সিনিভা ফিলিসে একজন টোঙ্গান। তিনি বিবিসিকে বলেন, টোঙ্গায় থাকা বয়স্ক মা-বাবার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছেন না। তাঁদের কাছে খাবার বা পানি আছে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি।
টোঙ্গাতাপুতের হাটাফু বিচ রিসোর্টের ফেসবুক পেজে বলা হয়, তাদের রিসোর্টটি পুরো ভেসে গেছে। রিসোর্টের লোকজন ঝোপঝাড়ের মধ্য দিয়ে গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। রিসোর্টের কোনো কিছুই তারা বাঁচাতে পারেনি।
রেডক্রস বলছে, বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার স্যাটেলাইট ফোনগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা খুবই দুর্বল। সুনামিতে ৮০ হাজারের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রেডক্রসের আঞ্চলিক পরিচালক আলেকজান্দার ম্যাথিউ বলেন, আগ্নেয়গিরির ছাই টোঙ্গার পানির সঙ্গে মিশে যেতে পারে। ম্যাথিউ আরও বলেন, পানি পরিশোধন করা খুব জরুরি।
গত অক্টোবরে টোঙ্গায় প্রথম একজন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হন। করোনার কারণে ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
অস্ট্রেলিয়া ত্রাণ কার্যক্রমবিষয়ক টোঙ্গার উপপ্রধান কার্টিস টু ইহালানগিনগি রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা করোনার আরেকটি সুনামি নিয়ে আসতে চাই না।’
টোঙ্গায় ১৭০টির বেশি দ্বীপ রয়েছে। দেশটির জনসংখ্যা প্রায় এক লাখ। তবে রেডক্রস বলছে, যতটা আশঙ্কা করা হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতি ততটা হয়নি। ফিজি থেকে রেডক্রসের সমন্বয়কারী কেটি গ্রিনউড বলেন, ভালো খবর হলো এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে, যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ততটা নয়।
ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সচল করতে দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগতে পারে। তবে জাতিসংঘ বলছে, টোঙ্গার ছোট দুটি দ্বীপ থেকে বিপৎসংকেত পাওয়া গেছে।
টোঙ্গায় থাকা পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়েছেন অনেকে। পেটিলিস টুইমা শনিবার বিকেলে সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে বলেন, ‘টোঙ্গায় থাকা পরিবার ও স্বজনের খোঁজ জানতে আমরা মরিয়া হয়ে উঠেছি।’