যুক্তরাজ্য থেকে গত সপ্তাহে নিজ দেশ সিঙ্গাপুরে ফেরেন শিক্ষার্থী চেলসি লি। তাঁর প্রস্তুতি ছিল বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। কিন্তু সরকার তাঁকে নিয়ে যায় একটি পর্যটন দ্বীপে, যেখানে তাঁর স্থান হয় পাঁচ তারকা হোটেলে।
সরকারের বদৌলতে এখন লি সকালে তাঁর কক্ষ থেকেই সমুদ্র দেখতে পান। অন্য সময় এ ধরনের একটি কক্ষে থাকতে তাঁর কয়েক শ মার্কিন ডলার খরচ হতো।
সিঙ্গাপুর বিদেশফেরত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো পাঁচ তারকা হোটেলে রাখা। এ নিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গ গতকাল শনিবার একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে, যার শিরোনাম ‘ইন সিঙ্গাপুর, কোয়ারেন্টিন কামস উইথ সি ভিউ, রুম সার্ভিস’।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুরের সরকার ঘোষণা দেয়, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা নাগরিকদের হোটেলে রাখবে, যাতে নাগরিকেরা বাড়িতে ফিরে পরিবারের সদস্যদের আক্রান্ত করতে না পারে। এটা আগের চেয়ে আরেকটু কঠোর পদক্ষেপ। এর আগে সরকার বিদেশ ফেরত নাগরিকদের আলাদা থাকার শর্তে বাড়িতে ফেরার সুযোগ দিত।
নতুন পদক্ষেপের সুযোগে চেলসি লির স্থান হয়েছে শাংরি লা’স রাসা সেন্টোসা রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা হোটেলে, যেখানে সকালে ডিম, সসেজ, রুটি, টোস্টসহ বিভিন্ন খাবার কক্ষে এসে যায়। আর সমুদ্র দেখতে দেখতে তা খান তিনি।
২১ বছরের তরুণী লি বলেন, কক্ষটা বেশ বড়। বিছানাটি কিং সাইজ। কেবল কার, সুইমিং পুল ইত্যাদি মিলিয়ে ব্যবস্থাটি দারুণ।
ব্লুমবার্গ বলছে, সিঙ্গাপুরে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংক্রমণ বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে ফিরছেন। দেশটিতে দৈনিক ১ হাজার ২০০ জন নাগরিক ওই দুই দেশ থেকে ফিরছেন। শনিবার পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৮০২ জন।
করোনাভাইরাস ছড়ানো রুখতে ২৪ মার্চ সিঙ্গাপুর সরকার ঘোষণা দেয় যে তারা হোটেলের মালিকদের সঙ্গে কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করার বিষয়ে আলোচনা করছেন। এখন যাঁরা বাড়িতে কোয়ারেন্টিন করছেন, তাঁরাও হোটেলে যাওয়ার আবেদন করতে পারছেন। হোটেলে যাঁরা থাকছেন, তাঁদের খরচ বহন করছে সিঙ্গাপুরের জনগণ, তাঁদের করের টাকায়।
সম্পত্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ৯৯ ডটকম বলছে, সিঙ্গাপুর সাড়ে সাত হাজারের বেশি হোটেল কক্ষ ও অ্যাপার্টমেন্ট বুকিং দিয়েছে, যেখানে বিদেশফেরত ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিন করা হবে।
করোনা ছড়িয়ে পড়ার সিঙ্গাপুরের হোটেলগুলো ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছে। গত বছর দেশটিতে ১ কোটি ৯১ লাখ পর্যটক এসেছিল। হোটেলগুলো আয় করেছিল ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় অর্ধেকের সমান। এ বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে সিঙ্গাপুর সরকার ২৫-৩০ শতাংশ পর্যটক কমবে বলে আশঙ্কা করেছিল। পরে দেখা গেল, করোনা ঠেকাতে অনেক কিছুই আটকে দিতে হলো।
সিঙ্গাপুরের হোটেল মালিক সমিতি ব্লুমবার্গকে জানাতে পারেনি যে কতগুলো হোটেল কোয়ারেন্টিন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। সংগঠনটির একজন মুখপাত্র বলেছে, সরকারের এ পদক্ষেপ হোটেলগুলোর আর্থিক সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
অবশ্য সিঙ্গাপুর সরকার দেশের অর্থনীতিকে করোনার আঘাত থেকে উদ্ধারের জন্য বড় প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর বাইরে পর্যটনশিল্পের জন্য সুখবর হলো, ২০২০ সালের জন্য তাদের সম্পত্তি কর দিতে হবে না।