দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম তাঁর সাবেক স্ত্রী প্রিন্সেস হায়া বিনতে আল হুসেইনের ওপর অতিমাত্রায় নির্যাতন চালিয়েছেন বলে রায় দিয়েছেন ব্রিটিশ আদালত। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডনের উচ্চ আদালতের বিচারপতি অ্যান্ড্রু ম্যাকফারলেন এ রায় দেন।
এর মধ্য দিয়ে নিজেদের দুই সন্তানের অভিভাবকত্ব নিয়ে এ দম্পতির দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের অবসান হলো। খবর এএফপির।
৪৭ বছর বয়সী প্রিন্সেস হায়া জর্ডানের প্রয়াত বাদশাহ হুসেইন বিন-তালালের মেয়ে।২০০৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল-মাখতুমের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। ২০১৯ সালে শরিয়া আইনের অধীন হায়াকে না জানিয়েই তাঁর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ করেন শেখ মোহাম্মদ। দুই সন্তান নিয়ে ২০১৯ সালে দুবাই ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান প্রিন্সেস হায়া।
সেখানকার একটি আদালতে সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে সাবেক স্ত্রী ও সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য প্রায় সাড়ে ৭২ কোটি ডলার পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে শেখ মোহাম্মদকে নির্দেশ দেন ব্রিটিশ আদালত। তবে সন্তানেরা কার দায়িত্বে থাকবে, তা নিয়ে এ দম্পতির আইনি লড়াই চলছিল।
গতকাল লন্ডনের হাইকোর্টের বিচারপতি অ্যান্ড্রু ম্যাকফারলেন বলেন, শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুম তাঁর স্ত্রী প্রিন্সেস হায়ার ওপর যে মাত্রায় নির্যাতন চালিয়েছেন, তা এখানকার বিচারব্যবস্থা পারিবারিক আদালতে মীমাংসিত মামলাগুলোর চেয়ে পুরোপুরি ব্যতিক্রম। হুমকি-ধমকি, সংবাদমাধ্যমে সাজানো প্রতিবেদন প্রকাশ, তাঁকে (হায়া) এড়িয়ে গোপনে তাঁর সম্পত্তি কেনার চেষ্টা, ফোন হ্যাক করা কিংবা এ মামলা ঠেকাতে শেখ মোহাম্মদ তাঁর সাবেক স্ত্রীর প্রতি যে ধরনের আচরণ দেখিয়েছেন, তা অতিমাত্রার নির্যাতন।
রায়ে আরও বলা হয়, পরিবারের যে সদস্যরা শেখ মোহাম্মদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতেন, তাঁদের প্রতি জবরদস্তিমূলক আচরণ করতেন তিনি। তাঁদের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ জারি রাখার চেষ্টা করতেন।
আদালতের রায় অনুযায়ী, প্রিন্সেস হায়া এখন থেকে এককভাবে ১৪ বছর বয়সী মেয়ে জালিলা ও ১০ বছর বয়সী ছেলে জায়েদের অভিভাবকত্ব পালন করবেন। তাঁদের চিকিৎসা ও স্কুলে পাঠানোর দায়িত্বও তিনিই সামলাবেন।
বিচারপতি ম্যাকফারলেন বলেন, শিশুদের ক্ষতির আশঙ্কা থেকে বাঁচাতে তাদের মাকে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামলানোর জন্য একক দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তটি ন্যায়সংগত।
শেখ মোহাম্মদ দূর থেকে ফোন কলের মাধ্যমে সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন প্রিন্সেস হায়া।
এখন লন্ডনে কেনসিংটন প্যালেসের কাছে একটি বাড়িতে থাকেন তিনি। রায়ের ব্যাপারে সন্তোষ জানিয়েছেন হায়া। আদালতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে গত কয়েক বছরকে ‘ভয়াবহ এক ভ্রমণ’ বলে উল্লেখ করেছেন হায়া।
এদিকে শেখ মোহাম্মদের এক প্রতিনিধি বলেছেন, বিতর্কিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করেছেন দুবাই শাসক।