>• সৌদি আরবের আল-উলা শহর এখন ভাসছে সংগীতের মূর্ছনায়
• সংগীত উৎসবে লেবাননের গায়িকা মাজিদা আল রুমি অংশ নিয়েছেন
• ফরাসি ধ্রুপদি বেহালাবাদক ঘেনো কেপিসোঁও জাদু দেখিয়েছেন
সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর আল-উলা এখন ভাসছে সংগীতের মূর্ছনায়। আলোর ঝরনাধারায় অবগাহন করে রাতভর মানুষ নিচ্ছে ধ্রুপদি সংগীতের স্বাদ। বছর দুই আগেও যা চিন্তা করা যেত না রক্ষণশীল সৌদি আরবে, সেখানেই এটি সম্ভব হয়েছে খোদ সৌদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাতেই।
জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেসকো) বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত মরুশহর আল-উলায় ‘উইন্টার অ্যাট তানতোরা’ নামে প্রথমবারের মতো এই আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, বিদেশি পর্যটকদের জন্য আল-উলার দরজা খুলে দেওয়ার বার্তা সারা বিশ্বে পৌঁছে দেওয়া। পর্যটনকে তেল-যুগ পরবর্তী অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই আয়োজন। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচির আওতায় আয়োজিত এই সংগীত উৎসবে লেবাননের গায়িকা মাজিদা আল রুমি যেমন অংশ নিয়েছেন, তেমনি ফরাসি ধ্রুপদি বেহালাবাদক ঘেনো কেপিসোঁ দেখিয়েছেন তাঁর জাদু। উৎসবের পর্দা নামবে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি।
সৌদি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে সংগীত উৎসবে যোগ দেওয়া একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এক পশ্চিমা বিপণন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সৌদি আরবে পর্যটনের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এখানে বেড়াতে এসে এখনই ‘সবকিছু দারুণ’ বলাটা কঠিন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন সৌদি ভিসা নিতে গিয়েছি দূতাবাসে, আমার বন্ধুরা রসিকতা করে বলেছে, প্রার্থনা করছি তুমি জীবিত ফিরে আসো।’ গত ২ অক্টোবর তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার বিষয়ে ইঙ্গিত করে এই রসিকতা।
দেশের সাংস্কৃতিক বিকাশের দ্বিচারিতা বিষয়ে সৌদি আরবের এক শিল্পী বলেন, ‘আমরা এমন এক দেশে বাস করি, যেখানে দিনে বাচ্চাদের বলা হয়, সংগীত নিষিদ্ধ। কিন্তু রাতেই তাদের কনসার্টে নিয়ে যাওয়া হয়।’
সৌদি আরবের দুই-তৃতীয়াংশ লোকের বয়স ৩০ বছরের নিচে। তাঁরা এখন বিনোদনের দিকে ঝুঁকছেন। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বিশ্লেষক সিনজিয়া বিয়ানকো বলেন, যুবরাজ বিন সালমান প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের কাছ থেকে রাজনীতির কৌশল ধার করেছেন। তিনি চাইছেন, তরুণেরা অর্থ উপার্জন ও বিনোদন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, তাহলে রাজনীতি ও সরকারের সমালোচনা নিয়ে তারা মাথা ঘামাবে না।
সারা বিশ্বের পর্যটক আকর্ষণের জন্য সৌদি আরব তার প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। সপ্তম শতকের আগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো উদ্ধার করতে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পাঁচ তারকা রিসোর্ট গড়ে তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের পর্যটন গাইড হিসেবে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ। রয়্যাল আল-উলা কমিশনের এক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, তাঁদের লক্ষ্য, দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই আল-উলাকে পর্যটকদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত করে দেওয়া।