শ্রীলঙ্কায় গত রোববার একের পর এক ভয়াবহ বোমা হামলার ঘটনায় নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯–এ পৌঁছেছে। হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার পর পরবর্তী সময় এসব লোকজনের মৃত্যু হয়েছে। এ হামলায় অন্তত ৫০০ লোক আহত হয়েছেন। আজ বুধবার দেশটির পুলিশ কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়েছেন বলে রয়টার্সের খবরে জানানো হয়।
রোববারের বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল মঙ্গলবার অন্তত ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৬০ জনকে আটক করা হলো।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস হামলার দায় স্বীকার করেছে। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার স্থানীয় চরমপন্থী গোষ্ঠী ন্যাশনাল তাওহিদ জামায়াতের (এনটিজে) ওপর দায় চাপাচ্ছে দেশটির সরকার।
এক দশক আগে তামিল বিদ্রোহের পর এটিকে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। দেশটির পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা বলেন, মৃত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৩৫৯–এ পৌঁছেছে।
দায় স্বীকার আইএসের
হামলার তিন দিন পর শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেটস (আইএস)। গতকাল আইএসের মুখপাত্র আমাক থেকে হামলার দায় স্বীকার করা হয়। এই দাবির সপক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি আইএস। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে আইএসের হামলার দায় স্বীকারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা দাবি করেছিল, শ্রীলঙ্কায় হামলার ধরনের সঙ্গে আইএসের হামলার ধরনের মিল রয়েছে।
গতকাল সকালেই পার্লামেন্টে দেশটির প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুয়ান বিজেবর্ধনে দাবি করেন, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে গুলি ছোড়ার ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডে উদ্যাপনের সময় একের পর এক বোমা হামলা চালানো হয়। শ্রীলঙ্কার দুটি ইসলামি গোষ্ঠী এই হামলার সঙ্গে যুক্ত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দুই ঘণ্টা আগে সতর্ক করেছিল ভারত
শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ বোমা হামলার অন্তত দুই ঘণ্টা আগে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাকে সতর্ক করেছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা। ভারত সরকারের এক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এনডিটিভির খবরে জানানো হয়, হামলার বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে আগাম সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, হামলার ব্যাপারে শ্রীলঙ্কাকে ৪ ও ২০ এপ্রিল দুই দিন সতর্ক করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে কারও নাম উল্লেখ না করে ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর এক কর্মকর্তা ও শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তার বাহিনীর এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাঁদের পদমর্যাদার শ্রীলঙ্কান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই হামলার পূর্ব সতর্কবার্তা জানায়। অপর একজন শ্রীলঙ্কান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, প্রথম হামলার ঘণ্টাখানেক আগে একটি সতর্কবার্তা এসেছিল। আবার আরেক কর্মকর্তা জানান, হামলার আগের দিন শনিবার রাতেই সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে সতর্ক করেছিল ভারত।
তবে হামলার দিনই শ্রীলঙ্কার পুলিশপ্রধান পুজুথ জয়াসুন্দরা জানিয়ে ছিলেন, এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ১০ দিন আগেই সতর্ক করেন। যদিও শেষ পর্যন্ত কোনো সতর্কবার্তা কাজে আসেনি।
রোববার ইস্টার সানডেতে প্রার্থনারত অবস্থায় তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে একের পর এক বোমা হামলা চালানো হয়। এরপর আরও দুই জায়গায় হামলা হয়। এ হামলায় ৩৫৯ জন নিহত ও ৫০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন বিদেশি। ৪৫ জন শিশু রয়েছে।