আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বেইলআউট (অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি) নিয়ে আলোচনা করতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল এখন শ্রীলঙ্কায়। গতকাল সোমবার শ্রীলঙ্কার সরকারের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমাতে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভা। রয়টার্স বলছে, শ্রীলঙ্কায় ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে পারে সরকারের এ পদক্ষেপ।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও কোভিড মহামারির কারণে সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতও তলানিতে ঠেকেছে। এতে জ্বালানি, ওষুধ, খাবারের মতো নিত্যপণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। এর প্রতিবাদে কয়েক মাস ধরে শ্রীলঙ্কায় চলছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় কয়েক মাস ধরেই এমন আর্থিক দুর্দশা চলছে। দেশটির ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ পড়েছে মহাসংকটে। শ্রীলঙ্কার জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী রয়টার্সকে বলেছেন, আগামী তিন দিনের মধ্যে জ্বালানি পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। ডিজেল ও পেট্রলের ক্রমাগত ঘাটতির কারণে জনগণের অসন্তোষ আরও বেড়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার দেশটির মন্ত্রিসভা সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমানোর কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার মানুষ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছিলেন। সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব তাঁদের শান্ত করতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার আর্থিক অব্যবস্থাপনার জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও প্রভাবশালী রাজাপক্ষে পরিবারকে দায়ী করছেন অনেকেই।
পর্যটনবিষয়ক মন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো টুইটারে লিখেছেন, ‘আজ মন্ত্রিসভায় সংবিধানের ২১তম সংশোধনী প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবটি এখন পার্লামেন্টে উঠবে।’
গত এপ্রিলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিজেদের ঋণখেলাপি ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে দেশকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয় সরকার। এরপরই ভঙ্গুর অর্থনীতির গতি ফেরাতে আইএমএফসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছে ৩০০ কোটি ডলার সাহায্য চাইতে শুরু করে সরকার।
গতকাল সোমবার আইএমএফের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোয় পৌঁছায়। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছেন। এদিন শ্রীলঙ্কার জন্য ১৭তম ঋণ কর্মসূচি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছেন বৈশ্বিক ঋণদাতা সংস্থাটির প্রতিনিধিরা।
প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী আইএমএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।’
তবে দীর্ঘদিন ধরে চলা সংকট নিয়ে জনমনে অসন্তোষ বেড়েছে। সোমবার বিক্ষোভকারীরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি ফটক অবরুদ্ধ করে দেন। এতে আইএমএফ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে বের হতে পারছিলেন না মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। পরে পুলিশ পাহারা দিয়ে তাঁদের সেখান থেকে বের করে নিয়ে যায়।