শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা কী চাইছেন

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের বাসভবনে শত শত বিক্ষোভকারী
ছবি: রয়টার্স

শ্রীলঙ্কার অধিকাংশ বিক্ষোভকারী সর্বদলীয় সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা চান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যারা আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করবে।

শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ জোরালো হলে গত শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে সরকার গঠনে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এরপরও বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে অবস্থান করছেন। বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, এই দুই নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত দুই বাসভবন ছাড়বেন না তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা।

সাবির মোহাম্মদ নামের ২২ বছরের এক তরুণ বলেন, ‘আমরা অনতিবিলম্বে গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগ চাই। এরপর অন্তত ছয় মাস একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করবে। আমরা কোনো সর্বদলীয় সরকার চাই না।’

অধিকাংশ বিক্ষোভকারীই শ্রীলঙ্কান পদুজানা পার্টির (এসএলপিপি) বিরোধী। এই দলটির নিয়ন্ত্রণ রাজাপক্ষে পরিবারের হাতে। সর্বদলীয় সরকার গঠিত হলে ক্ষমতা তাদের হাতেই থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন বিক্ষোভকারীরা।

মেলানি গুনাথিলাকে নামের ৩৫ বছরের এক নারী বলেন, বিক্ষোভকারী নেতারা সর্বদলীয় সরকারের কঠোর বিরোধী। তিনি বলেন, সর্বদলীয় সরকার গঠিত হলে রাজাপক্ষে পরিবার পেছন থেকে কলকাঠি নাড়তে পারে।

৫ জুলাই একটি কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেন বিক্ষোভকারীরা। সেখানে জনতা আরাগালয় (জনগণের সংগ্রাম)–এর সদস্যদের মধ্য থেকে একটি গণপরিষদ গঠন করতে হবে, যা দেশের রাজনৈতিক পালাবদলের বিষয়টি দেখভাল করবে এমন দাবি জানানো হয়। এ ছাড়া ছয় দফা দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভকারীদের অন্যতম আরকেটি দাবি হলো অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা মানুষের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে।

সাবির বলেন, রাজনৈতিক দল ও ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে মঙ্গলবারের পর বিক্ষোভ আন্দোলনকারীদের কয়েকজন প্রতিনিধির দেখা করার কথা রয়েছে। সেখানে আমরা আমাদের সম্প্রতি কর্মপরিকল্পনা দেওয়া প্রস্তাবগুলো তুলে ধরব।

দাবিগুলো হলো—

১. প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে।

২. প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহ ও তাঁর সরকারকে অতিসত্বর ক্ষমতা ছাড়তে হবে।

৩. একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। যার মেয়াদ হবে ন্যূনতম ১ বছর।

৪. গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়—এমন নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে এবং আগামী ১ বছরের মধ্যে এটা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. নতুন সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করা পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের নির্বাহী ক্ষমতা কমাতে হবে, পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

৬. উল্লেখিত দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল নীতি।

বর্তমানে বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্বের কোনো কাঠামো বা একক কোনো সংগঠন নেই। তবে ইন্টার ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন যা বামপন্থী ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টির অঙ্গসংগঠন এবং জনতা বিমুক্তি পেরামুনার (জেভিপি) ছাত্রসংগঠন সোশ্যালিস্ট ইয়ুথ ইউনিয়ন বিক্ষোভে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সুইমিং পুলে বিক্ষোভকারীদের গোসল

সোশ্যালিস্ট ইয়ুথ ইউনিয়ন ইরাঙ্গা গুনাসেকারা আল–জাজিরাকে বলেন, সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে যাতে নিজেদের ভবিষ্যৎ কান্ডারি বেছে নিতে পারে, সেই পথ তৈরি করে দিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবেবর্ধনের সম্ভাব্য নিয়োগের বিষয়ে মেলানি বলেন, বিক্ষোভকারীরা উদ্বিগ্ন যে তিনিও ‘অন্য কারও চেয়ে ভালো নন’।

শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব পালন করবেন পার্লামেন্টের স্পিকার। কিন্তু বর্তমান স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে রাজাপক্ষে পরিবারের আত্মীয়। এ কারণে বিক্ষোভকারীদের আশঙ্কা তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলে অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন হবে না।

প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিছায় শুয়ে আছেন বিক্ষোভকারীরা

শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুরবস্থার জন্য অধিকাংশ মানুষ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে ও তাঁর পরিবারকে দায়ী করছেন। গোতাবায়া পরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত মার্চেই আন্দোলন শুরু হয় কলম্বোসহ দেশটির বিভিন্ন শহরে। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল ক্ষমতা থেকে গোতাবায়ার পদত্যাগ। এ দাবিতে গত শুক্রবার কলম্বোজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে শনিবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।