শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সরকারকে তাগিদ দিয়েছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল এসজেবি। তা না হলে সরকারকে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি করার হুমকি দিয়েছে তারা। আজ শুক্রবার পার্লামেন্টে এসজেবি নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা এ হুমকি দিয়েছেন। খবর রয়টার্সের।
দুই কোটির বেশি জনসংখ্যার দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আছে। বাজারে পণ্য নেই। খাদ্য, জ্বালানি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হয়েছে। ব্যাপক দুর্দশায় দিন যাপন করছে মানুষ। পোশাক, চা-সহ বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নেতারা সতর্ক করেছেন, চলতি বছর রপ্তানির হার ২০-৩০ শতাংশ কম হতে পারে।
শুক্রবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে সমাজি জন বলওয়েগায়ার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা বলেন, ‘সরকারের উচিত আর্থিক সংকট নিরসন করা এবং শাসনপদ্ধতির উন্নতির জন্য কাজ করা। তা না হলে আমরা সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনব।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রীলঙ্কাকে অবশ্যই বিশৃঙ্খল এ ঋণখেলাপি অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঋণ স্থগিতের জন্য সরকারকে অবশ্যই কাজ করতে হবে এবং ঋণ পরিকল্পনা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে আর্থিক উপদেষ্টা নিয়োগ দিতে হবে।’
চলমান পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে। কয়েক দশকের মধ্যে দেশটির সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকট সামলাতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ হচ্ছে। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ চাইছেন। কিন্তু গোতাবায়া পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন তাঁর সরকারের সড়কমন্ত্রী জনস্টন ফার্নান্দো।
চলতি সপ্তাহে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের প্রায় পুরো মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করেছে। গুটিকয় মন্ত্রী তাঁর সঙ্গে আছেন। কমপক্ষে ৪১ জন আইনপ্রণেতা ক্ষমতাসীন জোট থেকে বের হয়ে গেছেন। তাঁরা স্বতন্ত্র আইনপ্রণেতা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। তবে গোতাবায়া সরকারের দাবি, পার্লামেন্টে এখনো তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে।
সংকট নিরসনে গোতাবায়া সর্বদলীয় সরকার গড়তে চেয়েছিলেন। গত সোমবার সরকারে এসে মন্ত্রিত্ব নেওয়ার জন্য সব দলের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। তবে গোতাবায়া ও তাঁর ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বদলীয় সরকার গঠনের এ আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি বিরোধী দলগুলো। এমনকি নিজ জোটের কিছু দলও সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে নতুন করে সাহায্য চাইছে শ্রীলঙ্কা। তবে সংস্থাটির সঙ্গে বৈঠকের আগেই নতুন অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগে বড় ধাক্কা খেয়েছেন প্রেসিডেন্ট। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র এক দিনের মাথায় গত মঙ্গলবার নতুন অর্থমন্ত্রী পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এমন অবস্থায় এ মাসে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার আগে নতুন অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন রাজাপক্ষে।