শ্রীলঙ্কায় বিক্ষোভ জোরালো হলে গত শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে সরকার গঠনে তিনি পদত্যাগ করবেন। তবে এরপরও বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে অবস্থান করছেন। বিক্ষোভকারীদের ভাষ্য, এই দুই নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে সরে না দাঁড়ানো পর্যন্ত দুই বাসভবন ছাড়বেন না তাঁরা।
এদিকে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিতে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সংঘর্ষে এক নারীসহ আহত ১০ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর অনলাইনের খবরের বলা হয়েছে, আজ মঙ্গলবার সকালে আহত হওয়ার এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে সংঘর্ষ শুর হয়।
হাসপাতাল সূত্রের বরাতে ডেইলি মিরর জানিয়েছে, চিকিৎসার জন্য এক নারীসহ ১০ জনকে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে কলম্বো ন্যাশনাল হসপিটালে (সিএনএইচ) ছয়জনকে ভর্তি করা হয়।
ছয়জনের মধ্যে দুজন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার পর ছাড়া পেয়েছেন। অন্যদের মধ্যে আরও দুজন বহির্বিভাগে চিকিৎসাধীন। তবে সংঘর্ষে মোট কতজন আহত হয়েছেন, তা জানায়নি ডেইলি মিরর।
শ্রীলঙ্কায় রিজার্ভ সংকট দেখা দেওয়ার পর জ্বালানি-সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের সংকটও দেখা দেয় দেশটিতে। এর জেরে শ্রীলঙ্কাজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। এই বিক্ষোভ থেকে দাবি জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর মাহিন্দা রাজাপক্ষে গত মে মাসে পদত্যাগ করেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন।
তবে প্রেসিডেন্ট বিক্ষোভকারীদের দাবি মেনে না নিলে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজধানী কলম্বোয় গত শুক্রবার কারফিউ জারি করা হয়। এরপরও বিক্ষোভ আরও জোরাল হয়। শনিবার প্রথমে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ও পরে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ বিক্ষোভ এখনো চলমান। কারণ, বিক্ষোভকারীরা এখনো এ দুই নেতার পদত্যাগের ব্যাপারে সন্দিহান। এ প্রসঙ্গে বিক্ষোভের ছাত্রনেতা লাহিরু বিরাসেকারা বলেন, ‘আমাদের যে সংগ্রাম, তা এখনো শেষ হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট বাসবভনে বিক্ষোভকারীরা গত রোববার কী কী করেছেন, এর বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। এর একটি ছবিতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বসে তাস খেলছেন বিক্ষোভকারীরা। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বিছানায় শুয়ে আছেন বিক্ষোভকারীরা। এর আগের দিন বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সুইমিংপুলে সাঁতার কেটেছেন।
এদিকে বিক্ষোভের মধ্যে রাজনীতিকদের মধ্যে বৈঠকও চলছে। ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মসৃণ করতে বৈঠক করছেন তাঁরা। এরই মধ্য ডেইলি মিররের খবরে বলা হয়েছে, পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। গতকাল সোমবার তিনি পদত্যাগপত্রে সই করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট দেশেই আছেন, পালিয়ে যাননি। গোতাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে কাল বুধবার (১৩ জুলাই) থেকে। দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে কাল জনসমক্ষে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগপত্র জাতির কাছে ঘোষণা করবেন।