আর্থিক সংকটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করার ইঙ্গিত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক। আইএমএফ বলেছে, শ্রীলঙ্কার ঋণ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। এদিকে বিশ্বব্যাংক বলেছে, শ্রীলঙ্কার জন্য একটি জরুরি সাহায্য প্যাকেজ প্রস্তুত করেছে তারা।
২ কোটি ২০ লাখ মানুষের দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে আমদানির মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা সরকার। এতে করে মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলছে। বিদ্যুৎ থাকছে না, খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের প্রতিবাদে দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে।
আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ভারত ছাড়াও অন্যান্য দেশ ও সংস্থার কাছে ঋণের আবেদন নিয়ে এ সপ্তাহে ওয়াশিংটনে গেছেন শ্রীলঙ্কার নতুন অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত না থাকায় শ্রীলঙ্কা ইতিমধ্যেই দেউলিয়া। সরকার বলেছে, আপাতত কোনো বৈদেশিক ঋণের কিস্তি শোধ করতে পারবে না তারা।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের এক মুখপাত্র বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা প্যাকেজের আওতায় জরুরি ওষুধ কেনার জন্য এক কোটি ডলার তাৎক্ষণিক ছাড় হয়েছে। সংস্থাটির চলমান কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য প্রস্তুতিবিষয়ক প্রকল্প থেকে শ্রীলঙ্কাকে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত সপ্তাহে আইএমএফের সঙ্গে বসন্তকালীন একাধিক বৈঠক করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বজুড়ে ঋণ প্রদানকারী সংস্থাটি অবশ্য অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে শ্রীলঙ্কাকে কী পরিমাণ সহায়তা দিচ্ছে, তা জানায়নি। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী শুক্রবার বলেন, শ্রীলঙ্কাকে আনুমানিক ৫০ কোটি ডলার সাহায্যের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের মুখপাত্র বলেছেন, শ্রীলঙ্কাকে যে অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প, দ্রুত তহবিল স্থানান্তর করে জরুরি ওষুধ ক্রয়, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা এবং দরিদ্র ও দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে নগদ অর্থসহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে ব্যয় করতে হবে।
বিশ্বব্যাংকের ওই মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, রান্নার গ্যাস, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ, ধান ও সার কেনা এবং অন্যান্য নিত্যপণ্যের জন্য আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তাঁদের প্রতিনিধির আলোচনা চলছে। তিনি আরও বলেছেন, শ্রীলঙ্কার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
এদিকে আইএমএফ গতকাল শনিবার এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তাদের কর্মীদের মধ্যে আলোচনায় শ্রীলঙ্কার সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সম্মিলিত কৌশল বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী শক্তিশালী করা এবং দরিদ্র ও দুর্বলদের রক্ষা করায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা সরকার তাদের ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের সার্বভৌম বন্ড পুনর্গঠনের জন্য উপায় খোঁজার ঘোষণা দেওয়ার পর আইএমএফের শ্রীলঙ্কা মিশনের প্রধান মাশাহিরো নোজাকি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ঋণদাতাদের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সংলাপে জড়িত থাকার কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাকে স্বাগত জানাচ্ছে আইএমএফ।