লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা শেষ। উত্তর–পূর্ব ভারতে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ও কংগ্রেস—দুই দলই জয় নিয়ে আশাবাদী। কর্মীদের মনোবল বাড়াতে দুই দলই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একে অন্যকে নিশ্চিহ্ন করার হুমকিও দিতে শুরু করেছে।
বিজেপির স্লোগান ‘কংগ্রেসমুক্ত উত্তর–পূর্ব ভারত’। আর কংগ্রেসের দাবি ‘বিজেপিমুক্ত উত্তর–পূর্ব ভারত’। কোন পক্ষ শেষ হাসি হাসে, তা দেখতে হলে থাকতে হবে অপেক্ষায়। মাঠে আছে আঞ্চলিক অনেক দলও।
উত্তর–পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য আসামের ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে তিন দফায়। ১১, ১৮ ও ২৩ এপ্রিল। ত্রিপুরা ও মণিপুর রাজ্যে ভোট হচ্ছে ১১ ও ১৮ এপ্রিল। বাকি পাঁচ রাজ্যে এক দফাতেই লোকসভার ভোট হচ্ছে। এর মধ্যে সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশে ১১ এপ্রিলই অনুষ্ঠিত হবে লোকসভার পাশাপাশি বিধানসভার ভোট।
এই আট রাজ্যেই বর্তমানে বিজেপি বা তাদের জাতীয় গণতান্ত্রিক জোট (এনডিএ) সরকার প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু শরিকি কাজিয়ার পাশাপাশি দলের ভেতরেও কোন্দলে বেশ জেরবার শাসক গোষ্ঠী।
গত লোকসভার ভোটে আটের মধ্যে পাঁচটি ছিল কংগ্রেসের। কিন্তু এখন একটিও তাদের হাতে নেই। তা সত্ত্বেও কংগ্রেস শিবির বেশ চাঙা। দলছুটদের অনেককেই ফিরিয়ে এনে গেরুয়া শিবিরের সামনে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে কংগ্রেস।
উত্তর–পূর্বাঞ্চলের আটটি রাজ্যে লোকসভার আসন ২৫টি। গত লোকসভার নির্বাচনে কংগ্রেস ও বিজেপি আটটি করে আসন পায়। বাকি নয়টির মধ্যে সিপিএম দুটি, আঞ্চলিক দল এআইইউডিএফ তিনটি, এনপিপি ও এসডিএফ একটি করে আসন পায়। বাকি আসনগুলো নির্দলে যায়।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ২৫টির মধ্যে অন্তত ২৩টি আসন চান। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দলের নেতাদের জানিয়েছেন, অন্তত ২০টি আসনে জিততেই হবে।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে শাসনক্ষমতায় থেকেও কংগ্রেস পেয়েছিল আসামের ১৪টির মধ্যে মাত্র তিনটি আসন। বিজেপি পায় সাতটি। সংখ্যালঘুদের সংগঠন এআইইউডিএফ পায় তিনটি। বাকি আসনটি পায় বোড়োরা।
এবার এনআরসির কারণে বাঙালিরা বিজেপি সরকারের ওপর চটেছে। আর অসমিয়ারা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের কারণে চটেছে। এসব কারণে বিজেপি ঘরে-বাইরে চাপের মধ্যে রয়েছে। বিজেপির শরিক দল অসম গণপরিষদ (অগপ) তাদের জোট ও মন্ত্রিত্ব ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে।
অরুণাচল প্রদেশে আবার পিআরসি (স্থায়ী নাগরিক প্রশংসাপত্র) নিয়ে বেশ বেকায়দায় বিজেপি। কংগ্রেসের দলছুটদের নিয়ে গড়া বিজেপি সরকারকে লোকসভার পাশাপাশি বিধানসভা ভোটেও লড়তে হবে। কিন্তু পিআরসি নিয়ে আন্দোলন ও পুলিশের গুলির ঘটনার পর গেরুয়া শিবির সমস্যায় রয়েছে।
নাগাল্যান্ডে রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপির শীর্ষ নেতা কেএনচিসি দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি একঝাঁক হেভিওয়েট নেতা সদলবলে ফিরে এসেছেন কংগ্রেসে।
মেঘালয়ে এনপিপি সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা ঘোষণা দিয়েছেন, রাজ্যের দুটি আসনে তাঁরা নিজেরাই প্রার্থী দেবেন। শুধু তা–ই নয়, আসামসহ অন্যান্য রাজ্যেও এনপিপি প্রার্থী দিচ্ছে।
সিকিম, মণিপুর, মিজোরামেও একই অবস্থা। ত্রিপুরায় ‘মহারাজা’ প্রদ্যোতকিশোর দেববর্মণকে প্রদেশ সভাপতি করায় বেশ চাঙা কংগ্রেস। তারা দলে ফিরিয়ে এনেছে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুদীপ রায়বর্মণের বাবা সমীররঞ্জন রায়বর্মণকে।
শাসক বিজেপি ও আইপিএফটি জোটের মধ্যেও সমঝোতার অভাব রয়েছে। প্রকাশ্যে বিরোধ চলছে। আইপিএফটির সহসভাপতি অনন্ত দেববর্মা বলেছেন, তাঁরা দুটি আসনেই লড়বেন। বিজেপি অবশ্য একটি আসনও ছাড়তে নারাজ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের লোকসভা ভোটে উত্তর–পূর্বাঞ্চল বিশেষ ভূমিকা পালন করতে চলেছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে এখানকার ২৫টি আসন। তাই দুই শিবিরই ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে।