ভারতের কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী তাঁর পদ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে কংগ্রেস চলতি সপ্তাহে আবার বৈঠক বসছে। বৈঠকে ভারতের প্রাচীন এই দলের সম্ভাব্য সভাপতির বিষয়ে আলোচনা করা হবে বলে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়।
সম্প্রতি শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হয় কংগ্রেসের। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলে বিপুল বিজয় পায় নরেন্দ্র মোদির বিজেপি। ওই দিনই দলের সভাপতির পদ রাহুল ছেড়ে দিচ্ছেন বলে কথা শোনা যায়। পরে গত শনিবার বৈঠকে বসে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি। সেখানেও নিজের পদত্যাগের ইচ্ছের কথা জানান রাহুল। ওই পদে মা সোনিয়া গান্ধী বা বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নাম বিবেচনায় না নেওয়ার অনুরোধ করেন রাহুল। পরাজয়ে বিধ্বস্ত কংগ্রেস রাহুলের এ মন্তব্যে বড় ধরনের জটিলতার মধ্যে পড়ে। তবে ওই সভায় রাহুলকে আপাতত পদত্যাগ না করতে অনুরোধ করেন কংগ্রেস নেতারা।
কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে থেকেছেন নেহরু-ইন্দিরা পরিবারের সদস্যরা। ১৯৯১ সালে রাজীব গান্ধী নিহত হওয়ার পর কংগ্রেসের সভাপতি হন সীতারাম কেশরী। কিন্তু দলটির অবস্থা সেই সময় বেশ নাজুক হয়ে যায়। এ সময় বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার অনুরোধে দলটির হাল ধরেন সোনিয়া গান্ধী।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেসের সভাপতি হন রাহুল গান্ধী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস হেরে যায়। সেই ধারাবাহিকতা এবারও বহাল রইল। এবার ভারতের ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একটিও আসন পায়নি কংগ্রেস। আর এরপরই দলের সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানান রাহুল। তবে সোনিয়া-তনয় জানিয়েছেন, একজন ভালো উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার জন্য তিনি দলকে সময় দেবেন। আর ‘সুশৃঙ্খল সৈনিক’ হিসেবে তিনি দলের জন্য কাজ করে যাবেন।
কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা শশী থারুর এনডিটিভিকে বলেন, ‘রাহুল এই পরাজয়কে ব্যক্তিগতভাবেই নিয়েছেন। তবে এটি ব্যক্তির বিষয় নয় মোটেও।’
কংগ্রেসকে নেহরু-ইন্দিরা পরিবারের বলয় থেকে মুক্ত করার বিষয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপিও অনেকবার কথা বলেছে। তবে থারুর বলেন, ‘নেহরু-গান্ধী পরিবারের নেতৃত্বে আমরা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করেছি।’
শনিবার পর্যন্ত সব ধরনের সভা ও সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেন রাহুল। গতকাল দলীয় নেতা আহমেদ প্যাটেল ও কে সি ভানুগোপাল রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে প্যাটেল জানান, সাক্ষাতের সময় রাহুলের সঙ্গে কিছু রুটিন দাপ্তরিক কাজের বিষয়েই তাঁর কথা হয়। এর বাইরে কিছু নয়।
এবারের লোকসভায় ৫২টি আসন পায় কংগ্রেস। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৪৪টি আসন পায় দলটি। গত বছরের ডিসেম্বরে বিধানসভার নির্বাচনে রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশে জিতে যায় কংগ্রেস। তবে এবারের লোকসভায় দলটি ওসব রাজ্যে ভালো করতে পারেনি। গত বছরের মে মাসে কর্ণাটকে জেতে কংগ্রেস। সেখানেও দলটির ভরাডুবি হয়। শুধু ২০১৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা পাঞ্জাবের ১৩ আসনের মধ্যে আটটি পেয়েছে কংগ্রেস।