রাশিয়া ও চীনের অস্ত্রে মানুষ মারছে মিয়ানমারের জান্তা

রাজপথে টায়ার জ্বালিয়ে মিয়ানমারের সেনাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন শহরে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

রাশিয়া ও চীনের দেওয়া যুদ্ধবিমান ও সামরিক সরঞ্জাম বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এতে মারা যাচ্ছে জান্তাবিরোধী সাধারণ মানুষ। আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছেন জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ থমাস অ্যান্ড্রিউ।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান থমাস অ্যান্ড্রিউ বলেছেন, চীন ও রাশিয়া ছাড়া সার্বিয়াও মিয়ানমারের জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। প্রতিবেদনে তিনি নৃশংসতায় ব্যবহৃত এসব অস্ত্রের জোগান বন্ধের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকে রাশিয়া, চীন ও সার্বিয়া তাদের অস্ত্র সরবরাহ করে আসছে। এসব অস্ত্র বেসামরিক লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে—এ বিষয়ে তারা পুরোপুরি অবগত ছিল।

মিয়ানমারের জান্তাকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ চেয়েছেন থমাস অ্যান্ড্রিউ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘এটা নিশ্চিত হওয়া উচিত যে বেসামরিক লোকদের হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো আর জান্তাকে সরবরাহ করা হবে না।’

মিয়ানমারের জান্তা বলছে, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে আপত্তি জানিয়েছে তারা। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদনের বিষয়ে মিয়ানমারের জান্তা এবং রাশিয়া, চীন ও সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ অভিযোগ করে বলছে, মিয়ানমারের বেসামরিক এলাকায় বোমা ও বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা। জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে নেওয়া ব্যক্তিরা এবং জাতিগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তারা অসম শক্তি প্রয়োগ করেছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া ড্রোন, দুই ধরনের যুদ্ধবিমান এবং দুই ধরনের সাঁজোয়াযান সরবরাহ করেছে। এ ছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও দিয়েছে তারা। চীনের সরবরাহ করা সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিমান। আর সার্বিয়া সরবরাহ করেছে রকেট ও কামানের গোলা।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গত বছর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অস্ত্র দেওয়া বন্ধ করার জন্য সদস্যদেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। সার্বিয়া ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও রাশিয়া ও চীন ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
সে সময় চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের সঙ্গে শত্রুতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিল। অন্যদিকে মিয়ানমারকে একঘরে করতে পশ্চিমাদের প্রচেষ্টা বন্ধে মিয়ানমারের জান্তার ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক মিত্র হয়েছে রাশিয়া।

বিবৃতিতে থমাস অ্যান্ড্রিউ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তেল ও গ্যাস থেকে রাজস্ব অর্জন এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহারের সুযোগ কমানোর পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি মিয়ানমারের কাছ থেকে কাঠ, রত্নপাথরের মতো পণ্য কেনার ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

থমাস অ্যান্ড্রিউ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, মিয়ানমারের জান্তা একটা সময় দুর্বল ছিল এবং আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের ঠেকানো যেতে পারে। জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি তাদের রাজস্ব আয় কমানো যায়, তাহলে জান্তার মিয়ানমারের জনগণের ওপর হামলার ক্ষমতা কমে যাবে।

মিয়ানমারে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। এরপর সেনাবাহিনী মিয়ানমারে জরুরি অবস্থা জারি করে। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। সহিংস দমন-পীড়নে প্রাণহানি সত্ত্বেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা তাঁদের সেনাশাসনবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে দেশজুড়ে দেড় হাজারের মতো বেসামরিক মানুষ নিহত হন।