ইউক্রেন সমস্যা নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাপান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আজ বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, কানাডা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
মস্কোর পদক্ষেপকে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন উল্লেখ করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রাশিয়ার সেনা মোতায়েনের আদেশ কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বিলম্ব না করে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে উত্তেজনা প্রশমনে এগিয়ে আসায় রাশিয়ার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
কিশিদা আরও বলেছেন, তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পূর্ব ইউক্রেনের রুশপন্থী বিদ্রোহীদের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের কর্মকর্তাদের ভিসা প্রদান জাপান বন্ধ রাখবে। রাশিয়ার সুনির্দিষ্ট কিছু লোকের জাপান ভ্রমণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের বাইরে দাঁদের সম্পদ টোকিও জব্দ করবে। এ ছাড়া জাপানে রাশিয়ার সরকারি বন্ড বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার বিস্তারিত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক করে নেওয়া হবে।
জ্বালানির মজুত জাপানের পর্যাপ্ত থাকায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে জ্বালানি পরিস্থিতির ওপর তাৎক্ষণিক বড় ধরনের নেতিবাচক কোনো প্রভাব তা ফেলবে না বলে মন্তব্য করেছেন কিশিদা। ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ রাখা নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
জাপান সরকার এর আগে পর্যন্ত পশ্চিমের তুলনায় রাশিয়ার প্রতি যথেষ্ট নমনীয় মনোভাব বজায় রেখে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর আজকের বক্তব্য আগের সেই অবস্থান থেকে টোকিওর সরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে উত্তরের রুশ দখলাধীন বিতর্কিত কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা আলোচনা জাপান বিঘ্নিত করতে চায়নি বলে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় মিত্রদের চেয়ে অনেক বেশি সহনশীল অবস্থান টোকিও গ্রহণ করে আসছিল। এ ছাড়া জ্বালানি আমদানির দিক থেকেও রাশিয়ার ওপর আংশিক নির্ভরশীলতা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা থেকে টোকিওকে বিরত রাখে।
জাপানে আমদানি হয়ে আসা কয়লার ১২ শতাংশের বেশি আসছে রাশিয়া থেকে। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের আনুমানিক এক–দশমাংশ জাপান আমদানি করছে রাশিয়া থেকে।
এদিকে সম্রাট নারুহিতোর জন্মদিন উপলক্ষে জাপানে আজ সরকারি ছুটি থাকায় শেয়ার ও মুদ্রাবাজার বন্ধ ছিল। সম্রাট নারুহিতো ৬২ বছরে পদার্পণ করলেন। জন্মদিনের প্রাক্কালে সংবাদ সম্মেলনে করোনাভাইরাস মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হৃদয়ে ‘আশার আগুন’ প্রজ্বলিত রাখতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সম্রাট নারুহিতো। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি অন্য কোন দেশের সঙ্গে জাপানের চলমান সম্পর্ক নিয়ে সরাসরি কোনো রকম মন্তব্য সম্রাট সাধারণত করেন না। গ্রীষ্মে টোকিও অলিম্পিক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি অলিম্পিকের সফল আয়োজনের জন্য কাজ করে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবী ও চিকিৎসাকর্মীদের পাশাপাশি অন্য সবার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, এদের অবদানের কল্যাণেই মহামারির কারণে এক বছর পিছিয়ে যাওয়া অলিম্পিক আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। টোকিও অলিম্পিক ও সেই সঙ্গে মাত্র শেষ হওয়া বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রীড়াবিদেরা একে অন্যের সঙ্গে যেভাবে মিশেছেন এবং ভাব বিনিময় করেছেন, সেটা তাঁকে মুগ্ধ করেছে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজমান থাকলেও তিনি আশা করছেন, মানুষের মধ্যকার যোগাযোগ রাষ্ট্রীয় এবং আঞ্চলিক সীমানা অতিক্রম করে যাবে এবং এ রকম এক শান্তিপূর্ণ বিশ্বের দিকে আমাদের সেটা নিয়ে যাবে, সবাই যেখানে একে অন্যকে গ্রহণ করে নিতে সক্ষম হবেন।