শ্রীলঙ্কায় কয়েক সপ্তাহের সরকারবিরোধী বিক্ষোভের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংস ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সরকারপন্থী ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর কারফিউ জারি করা হয়েছে। এরই মধ্যে সন্ধ্যায় হাম্বানটোটায় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের মা–বাবা স্মৃতিস্তম্ভ এবং তাঁর বড় ভাই সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের প্রতিকৃতি ধ্বংস করা হয়েছে। তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়, দ্বীপরাষ্ট্রটির অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের মধ্যে সোমবার সকালে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। সকালে রাজাপক্ষে পরিবারের সমর্থকেরা কলম্বোর কেন্দ্রস্থলে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। গত ৯ এপ্রিল থেকে সেখানে বিক্ষোভকারীরা শিবির গেড়ে বিক্ষোভ করে আসছেন।
ওই ঘটনার জেরে রাজধানী কলম্বোর কাছে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোর পর এক আইনপ্রণেতার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সহিংসতা বন্ধে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হলেও বিক্ষোভ–সহিংসতা বন্ধ হয়নি। দেশটির একজন আইনপ্রণেতা এবং সাবেক এক মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মাউন্ট লাভিনিয়া এলাকায় সাবেক মন্ত্রী জনস্টন ফেরনান্দোর আবাসিক ভবন ও বর্তমান এমপি সনাথ নিশানথার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ভিডিও ফুটেজে জ্বলন্ত ঘর থেকে আগুনের শিখা উঠতে দেখা গেছে।
শ্রীলঙ্কাজুড়ে আজ হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। বিক্ষোভ–সহিংসতার মুখে পদত্যাগ করেছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে।
সোমবার প্রথমে মাহিন্দা রাজাপক্ষের সমর্থকেরা রড ও লাঠি নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান। এরপর দুই পক্ষের সহিংসতায় আরও দুজন নিহত ও দেড় শতাধিক মানুষ আহত হন।
১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়েছে শ্রীলঙ্কা। কয়েক মাস ধরে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে পড়েছে দেশটি। ভয়াবহ বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কবলে পড়েছেন শ্রীলঙ্কাবাসী।
এর প্রতিবাদে মাসখানেকের বেশি সময় ধরে শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। গত ৯ এপ্রিল থেকে রাজধানী কলম্বোয় প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে অবস্থান নিয়ে আছেন বিক্ষোভকারীরা। আজ রাজধানীর বাইরে থেকে প্রধানমন্ত্রীর কয়েক হাজার সমর্থককে বাসে করে রাজধানীতে আনা হয়। তাঁরা প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের পাশে অবস্থান নিয়ে থাকা বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালান। তাঁদের তাঁবু ফেলে দেওয়ার পাশাপাশি সরকারবিরোধী ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ দাবিতে অবস্থানরত ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালান তাঁরা।
সংঘর্ষ থামাতে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে কলম্বোয় কারফিউ জারি করা হয়। পরে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়।