দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। এ জন্য তিনি আজ শনিবার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় পৌঁছান। এ সম্মেলনে জান্তাপ্রধানের প্রতি মিয়ানমারে হত্যা, নৃশংসতা ও রক্তপাত অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন আসিয়ান জোটের নেতারা।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্মেলনে দেওয়া ভাষণে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন মিয়ানমারে চলমান হত্যা ও নৃশংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাব মিয়ানমার নিঃশর্তভাবে বিবেচনা করবে।’
জান্তা সরকারের প্রতি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর আহ্বান, নৃশংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমারে গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রতি অনুরোধ থাকবে, বিক্ষোভ দমনের নামে সহিংসতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিন।
মিয়ানমারে শান্তি ফেরাতে আসিয়ান দেশগুলোর আহ্বান ও উদ্যোগ দেশটির সেনাবাহিনী মেনে চলবে বলে আশা প্রকাশ করেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং।
গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আটক করা হয় অং সান সু চিসহ দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের। এরপর প্রথম বিদেশ সফরে আজ জাকার্তা পৌঁছান জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং। ইন্দোনেশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, জান্তাপ্রধান মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থার একটি বিশেষ উড়োজাহাজ থেকে বেসামরিক পোশাকে নেমে আসছেন। এ সময় তাঁর পরনে কালো রঙের স্যুট ছিল।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর আড়াই মাস ধরে চলা বিক্ষোভে মিয়ানমারে সেনা-পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত শিশুসহ সাত শতাধিক বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। আটক হয়েছেন সাংবাদিক, শিল্পীসহ তিন সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী।
নিজ দেশের মানুষের ওপর চরম শক্তি প্রয়োগ ও হত্যার জেরে ব্যাপক সমালোচিত হয়েছেন জান্তাপ্রধান। শান্তিপূর্ণ উপায়ে চলমান সংকট নিরসনে এগিয়ে এসেছে আঞ্চলিক জোট আসিয়ান। উদ্যোগ নিয়েছে আলোচনার। এ আলোচনায় অংশ নিতেই সমালোচনার ঝড় মাথায় নিয়ে ইন্দোনেশিয়া সফর করছেন মিন অং হ্লাইং।
যদিও সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর আসিয়ান জোট থেকে মিয়ানমারকে বের করে দেওয়ার দাবি উঠেছে। তবে আসিয়ান জানিয়েছে, এ জোট ঐতিহাসিকভাবেই কোনো সদস্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামায় না। এর আগে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সংকট নিরসনে আসিয়ান নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।