‘যে নারীরা বোরকা পরছেন না, তাঁরা পশুর মতো হওয়ার চেষ্টা করছেন’

বিভিন্ন বিলবোর্ডেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে পোস্টার
বিভিন্ন বিলবোর্ডেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে পোস্টার

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে পোস্টার। সেখানে লেখা, ‘যে মুসলিম নারীরা সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা পোশাক পরছেন না, তাঁরা দেখতে পশুর মতো হওয়ার চেষ্টা করছেন।’ বৃহস্পতিবার তালেবান সরকারের স্থানীয় এক কর্মকর্তা এ ধরনের পোস্টার লাগানোর খবরটি এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন।

গত মে মাসে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ নেতা ও তালেবান প্রধান হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা একটি আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে বলা হয়, নারীদের সাধারণত বাড়িতেই অবস্থান করা উচিত। তাঁদের যদি বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে, তবে পুরোপুরি শরীর ও মুখ ঢাকা বোরকা পরতে হবে।

চলতি সপ্তাহে তালেবান সরকারের পুণ্যের প্রচার ও পাপ প্রতিরোধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয় কান্দাহার শহরজুড়ে পোস্টার সাঁটিয়েছে। এসব পোস্টারে নারীর মাথা থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত ঢাকা বোরকার ছবি দেখা গেছে।

পোস্টারে লেখা আছে, ‘মুসলিম নারীদের মধ্যে যাঁরা হিজাব পরেন না, তাঁরা দেখতে পশুর মতো হওয়ার চেষ্টা করছেন।’

আফগানিস্তানের বিভিন্ন ক্যাফে ও দোকানের দেয়ালে পোস্টারগুলো সেঁটে দেওয়া হয়েছে। কান্দাহারের বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ডগুলোতেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে এ পোস্টার। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ছোটখাটো, আঁটসাঁট ও স্বচ্ছ পোশাক পরাটাও আখুন্দজাদার আদেশবিরোধী।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ব্যাপারে জানতে রাজধানী কাবুলে ওই মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় এক শীর্ষ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, এ ধরনের পোস্টার লাগানো হয়েছে।

কান্দাহারে পুণ্যের প্রচার ও পাপ প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রধান আবদুল রহমান তায়েবি বলেন, ‘আমরা এই পোস্টারগুলো লাগিয়েছি। যে নারীরা জনসমক্ষে মুখ ঢেকে চলাচল করবেন না, আমরা তাঁদের পরিবারকে জানাব এবং আদেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেব।’

আখুন্দজাদার আদেশে বলা হয়েছে, যে নারীরা এ নিয়ম মেনে চলবেন না, তাঁদের পুরুষ স্বজনদের সতর্ক করতে হবে, এমনকি সরকারি চাকরি থেকে তাঁদের বরখাস্ত করতে হবে। আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বাইরে বোরকা পরার ঘটনা খুব পরিচিত।
বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট তালেবানের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, তালেবান সরকার নারীদের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগত দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তাঁদের (আফগান নারীদের) পরিস্থিতি গুরুতর।’

গত বছর ক্ষমতা দখলের পর তালেবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত শাসন মেয়াদে তারা যত কঠোর ছিল, তার চেয়ে বেশি নমনীয় হবে। তবে আফগানিস্তানে আগস্ট থেকেই নারীদের ওপর অনেকগুলো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। হাজারো নারী শিক্ষার্থীর মাধ্যমিক স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক সরকারি চাকরিতে নারীদের নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নারীদের একা চলাফেরার ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নারীরা শুধু দিনের বেলায় সরকারি পার্কগুলোতে যেতে পারেন, ওই সময়ে পুরুষদের পার্কে যাওয়া নিষেধ।