সরকার গঠনে টানাপোড়েনের কারণে মাত্র ২৬ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আদিব। বিশ্লেষকেরা বলছেন, মন্ত্রী প্রশ্নে শিয়াপন্থী দুই দল হিজবুল্লাহ ও আমাল মুভমেন্ট ছাড় না দেওয়ায় আদিব এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে মুস্তাফা আদিব নতুন সরকার গঠন থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পদত্যাগের আগে তিনি প্রেসিডেন্ট মিশেল আউনের সঙ্গে বৈঠক করেন। টেলিভিশনে দেওয়া বক্তৃতায় মুস্তাফা আদিব ক্ষমা চেয়ে বলেন, দেশকে রক্ষা করতে জনগণের সংস্কারবাদী সরকার গঠনের আকাঙ্ক্ষা তিনি পূরণ করতে পারেননি।
গত ৪ আগস্ট বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবের সরকার পদত্যাগ করে। এরপর ৩১ আগস্ট দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে সংসদীয় দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হন সুন্নিপন্থী নেতা মুস্তাফা আদিব।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নিজেদের পক্ষে রাখতে কোনো ছাড় দিতে রাজি হয়নি শিয়াপন্থী প্রধান দুই দল হিজবুল্লাহ ও আমাল মুভমেন্ট। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই সংকটেই মুস্তাফা আদিব পদত্যাগ করেছেন। প্রসঙ্গত কিছুদিন আগে হিজবুল্লাহর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আমাল পক্ষের সাবেক একজন মন্ত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নতুন সরকার গঠনের জন্য বারবারই লেবাননের রাজনৈতিক দলগুলোকে তাগিদ দিয়ে আসছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। তিনি বিপর্যস্ত লেবাননের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিদেশি অর্থ সহায়তা টিকিয়ে রাখতে এই সরকার গঠনের তাগিদ দেন।
মুস্তাফা আদিবের এই পদত্যাগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশটির সুন্নিপন্থী নেতা ও দুই বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ আল হারিরি। তিনি বলেন, যারা লেবাননের কট্টরপন্থী নেতাদের কারসাজিতে ফ্রান্স প্রেসিডেন্টের উদ্যোগ বাতিল হওয়ায় খুশি। মনে রাখা উচিত, তারা একটি সুযোগ হাতছাড়া করলেন। এক সময় তারা আফসোস করবে আর আঙুল কামড়াবে।
পার্লামেন্টের স্পিকার ও আমাল মুভমেন্টের নেতা নাবিহ বেরি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও তাঁর পক্ষ মাখোঁর উদ্যোগ বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবেন।
সম্প্রতি মন্ত্রী পরিষদ গঠন নিয়ে আল জাজিরার স্থানীয় প্রতিনিধিকে প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতে না পারলে লেবানন নরকে পরিণত হবে। আদিবের এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্টের সেই কথারই প্রতিফলন ঘটল। কারণ মুস্তাফা আদিব প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হওয়ার পর একটি দলনিরপেক্ষ সংস্কারবাদী সরকার গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ৫০ লাখ জনগোষ্ঠীর লেবাননে ৫৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। কিন্তু বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের পর এই অবস্থা আরও করুণ হয়েছে। বলা হচ্ছে, যে সংকটের মুখে লেবানন বর্তমানে পড়েছে তা ১৯৭৫ থেকে ১৯৯০ সালে চলা গৃহ যুদ্ধ ও চলমান করোনা মহামারিকেও হার মানিয়েছে। ওই বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রায় ২০০ মানুষ নিহত ও কয়েক শ আহত হন। এই ঘটনায় এখনো বাস্তুচ্যুত অবস্থায় আছেন কয়েক লাখ মানুষ।