যেভাবে জীবনটা বন্দী হলো আফগান নারীদের

আফগান নারী
ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত সেপ্টেম্বরে কাবুলের রাস্তায় নারী অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে গিয়ে তালেবানের বন্দুকের মুখে পড়তে হয়েছিল মারজান আমিরিকে। তালেবান সদস্যরা তাঁকে যৌনকর্মী আখ্যা দিয়ে লাথি মেরেছিল। বলেছিল, আবার দেখলে গুলি করবে। কিন্তু সেই হুমকি তাঁকে এতটুকু নাড়াতে পারেনি, যতটা ভয় পেয়েছিলেন তিনি ঘরে ফিরে। ২৪ বছরের এই সাবেক সরকারি কর্মীকে ঘরে ফিরতেই মার খেতে হয়েছিল। বাবার নিষেধ অমান্য করে বিক্ষোভে যোগ দেওয়ায় তাঁকে মাটিতে ফেলে ফুটবলের মতো একের পর এক লাথি মেরেছেন তিনি।

মারজান আমিরি আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন। গত বছরের ১৫ আগস্ট তালেবান ক্ষমতা দখলের পর চাকরি হারান তিনি। শুধু মারজানই নন, তাঁর মতো বহু নারীকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। তেমনই একজন খাতেরা।

ক্ষমতার পালাবদলের সেই দিনটিতে অন্যদিনের মতোই স্কুলে ছিলেন ভূগোলের শিক্ষক খাতেরা। ক্লাস চলছিল তাঁর। ছাত্রদের বলছিলেন, পাঠ্যবইয়ের নির্দিষ্ট পৃষ্ঠা খুলতে।

ক্লাসে তখন ৪০ জন ছাত্র। শিক্ষার্থীরা পৃষ্ঠা খুঁজে পাওয়ার আগেই কয়েকজন শিক্ষক এসে ক্লাসে ঢোকেন। তাঁদের সবার হাতে ফোন। তাঁরা ফেসবুকে ব্যস্ত। কেউ বলছেন, তালেবান কাবুলের শহরতলি কুয়ারঘাতে অবস্থান করছে, কেউ বলছেন ইতিমধ্যে তালেবান কাবুলে ঢুকে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধান শিক্ষক স্কুল বন্ধ করে দিয়ে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।

খাতেরা যখন বাড়ির উদ্দেশে বাসস্টেশনে পৌঁছান, তখন দেখেন, চারপাশে মানুষ শুধু দৌড়াদৌড়ি করছে। আফগান সেনারাও পিঠে ব্যাগ নিয়ে বিমানবন্দরের দিকে ছুটছেন, আর তাঁদের পেছনে সন্তানেরা মায়ের স্কার্ফ ধরে ছুটছে। তিনি নিশ্চিত হলেন, তালেবান শহরে ঢুকে পড়েছে। আর তখনই তাঁর হৃৎকম্পন বেড়ে যায়, তিনি দৌড়াতে শুরু করেন। মনকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন, এটি দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু না।

তালেবানের পক্ষ থেকে ছেলেদের স্কুল খুলে দেওয়ার ঘোষণার এক সপ্তাহ পর ২৫ সেপ্টেম্বর আবার স্কুলে ডাক পড়ে খাতেরার। প্রিয় কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আনন্দে নেচে ওঠে মন। কিন্তু গিয়েই জানতে পারেন তাঁর চাকরিটি নেই। প্রধান শিক্ষক সব নারী সহকর্মীকে বলেন, ইসলামিক আমিরাত আফগানিস্তান নারীদের কাজ করার বিরোধী। ফেরার সময় স্কুলের ফটকে এসে প্রিয় ক্লাসরুমের দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছিলেন। সেখানে ১০ বছর ক্লাস নিয়েছেন তিনি। ছেলেদের বলতে চাইছিলেন, ‘ছেলেরা, আমি একদিন ফিরে আসব।’ ততক্ষণে অশ্রু গড়িয়ে মাটিতে পড়ছে।

তালেবান যেদিন ক্ষমতা নিয়েছিল, সেদিন খাতেরা ভয় পেয়েছিলেন, কিন্তু নিজের প্রিয় কর্মস্থল ছাড়তে বাধ্য করায় সেদিন তাঁর হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল।

তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর কয়েক দফায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন নারীরা

আইনে স্নাতক ডিগ্রিধারী ৩২ বছর বয়সী ওয়াহিদা আমিরি কাবুলের প্রাণকেন্দ্রে একটি পাঠাগার চালাতেন। সেখানে ছিল প্রায় পাঁচ হাজার বই। তাঁর স্বপ্ন ছিল এই বইয়ের রাজ্যের আরও বিস্তার ঘটাবেন। দেশজুড়ে নারীদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করে তুলবেন। কিন্তু তালেবান আসার পর সব পাল্টে গেল। কাজে যেতে না পেরে বেশির ভাগই সময় ওয়াহিদার কাটতে শুরু করে বারান্দায়। আগে এই বারান্দায় দাঁড়ালে মানুষের কোলাহল দেখা যেত, পাখির গান শোনা যেত। এখন সব সুনসান। প্রতিদিন শুধু বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া ফ্লাইটের সংখ্যা গোনেন। ভাবতে থাকেন, সবাই যদি চলে যায়, তাহলে থাকবে কে? কোনো শিক্ষিত নারী কি শেষ পর্যন্ত এখানে থাকবে? এর মধ্যে ওয়াহিদার এক বান্ধবী ফোন দিয়ে প্রতিবাদ জানানোর কথা বলেন।

৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে বেশ কয়েকজন নারী জড়ো হলেন এক বন্ধুর বাড়িতে। তাঁরা নিজেদের স্পনটেনিয়াস মুভমেন্ট অব আফগান ওমেন ফাইটার্স হিসেবে পরিচয় দেন। পরের দিন তাঁরা সম–অধিকারের দাবিতে সড়কে নামেন। ফোরোশগাহ নামের এক বিপণিবিতানে জড়ো হন তাঁরা। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদগামী সব পথে শোভাযাত্রা করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনের রাস্তায় যেতেই ঘিরে ধরে তালেবান সদস্যরা।

ওয়াহিদা বলেন, ‘তারা সংখ্যায় অনেক ছিল। তারা আমাদের চারপাশে চক্কর দিচ্ছিল। আমরা তাদের বোঝাচ্ছিলাম যে আমাদের বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ, কিন্তু ততক্ষণে তারা আমাদের একটি দেয়ালের সঙ্গে চেপে ধরে। এরপর তারা আমাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।’

ওই দিনের পর অনেক নারী বলেছেন, পরিবার থেকেই বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। না শুনলেই করা হচ্ছে মারধর, চলছে নির্যাতন। এরপরও হাতে গোনা কিছু নারী এখনো তাঁদের কর্মস্থলে টিকে আছেন।

এই নারীদের একজন হিলা। ২৫ বছরের এই তরুণী কাবুলে রয়ে যাওয়া কিছু বিদেশি দূতাবাসের একটিতে কাজ করছেন। কয়েক বছর ধরে তিনি বাবা–মাকে আর্থিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছেন, তাঁর অর্থে ছোট ভাইবোনদের পড়াশোনা চলছে। অথচ এই তালেবান ক্ষমতায় আসার পর তাঁর ছোট ভাই বেশ খুশি।

ছোট ভাইয়ের ভাষ্য, তালেবান যা বলে, তা নারীদের জন্য ভালো। কারণ শরিয়াহ আইন অনুযায়ী এই বিধিনিষেধ, যা নারীদের মান্য করা উচিত।

হিলা বলেন, ‘পুরুষ যারা আমার ভাইয়ের মতো, তারা তালেবান ফিরে আসায় খুশি। তারা মনে করছে, ক্ষমতা এখন তাদের হাতে।’ তবে হিলা নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। কারণ, তাঁর এক খালাতো বোন যিনি আইনে স্নাতক, তাঁকে তাঁর দুলাভাইয়েরা শিক্ষকতার চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছেন। তাঁকে সেই পরিণতি ভোগ করতে হয়নি।

২৪ বছরের ফাহিমা আফগানিস্তানের বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মী। তাই এখন তাঁর সঙ্গে আর দেখা করে না তাঁর প্রিয় বন্ধু। ফাহিমার ভাষ্য, তিনি ও তাঁর নারী সহকর্মীদের কখনোই পুরুষ সহকর্মীরা মন থেকে মেনে নেননি। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর সেসব কর্মী আরও উগ্র হয়ে ওঠেন।

তালেবান যেদিন ক্ষমতা দখল করল, সেদিন সকালেও তাঁর কর্মস্থল বিমানবাহিনীর সদর দপ্তরে গিয়েছিলেন ফাহিমা। যেতেই পুরুষ সহকর্মীরা তাঁকে নিয়ে উপহাস শুরু করেন। বলতে থাকেন, আজকে থেকে বোরকা পরে আসতে হবে, না হলে ঘরে বসে থাকতে হবে। এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ফাহিমা। তালেবান ক্ষমতায় এসে ক্ষমার ঘোষণা দিলেও সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক অনেক কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গনি সরকারের উপদেষ্টা ও মন্ত্রী নার্গিস নেহান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তাদের সঙ্গে অন্য দেশগুলোকে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করতে নারী অধিকারের এই ইস্যুটাকে ব্যবহার করেছে। তারা যখন আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, নারীদের কথা ভাবল না। নারীদের সহায়তার বিষয়টি যদি এতই গুরুত্বপূর্ণ হতো, তাহলে তারা এত সহজে নিজেদের গুটিয়ে নিত না।

তালেবান গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে নেয়। মনে করা হচ্ছিল, তালেবান তাদের আগের কট্টর পন্থা থেকে সরে এসে উদারনীতি গ্রহণ করবে। কিন্তু ক্ষমতা দখলের পর এখন পর্যন্ত সে ধরনের উল্লেখ করার মতো কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। সবচেয়ে বড় উদ্বেগ দেখা দেয় আফগান নারীদের নিয়ে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা নারীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দেশটিকে চাপে রাখতে বেশ কয়েকটি দেশ সহায়তা তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে।
অথচ আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে আসার পর তারা জানিয়েছিল, দেশটিতে নারীদের অধিকার রক্ষা করা হবে। তবে ওই প্রতিশ্রুতি থেকে তারা দূরে সরে গিয়েছে। বাস্তবতা হলো, প্রায় প্রতিটি দিনই দেশটির নারী ও মেয়েদের জন্য খারাপ খবর দিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীনেরা। নারীর স্বাধীনতা যেন খাঁচায় বন্দী।

ক্ষমতায় এসেই নারীদের চলাফেরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে তালেবান। বাধ্যতামূলক করা হয় বোরকা পরা। মুখও কেউ দেখতে পারবে না। ১৯৯০–এর দশকে ক্ষমতায় থাকার সময়ও তালেবানের আচরণ এমনই ছিল। এখন নতুনত্ব হলো শরিয়াহ আইনের দোহাই দিয়ে এসব বিধিনিষেধ আরোপ।

শিক্ষা ও কর্মক্ষত্রে নারীদের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে তালেবান বারবারই আশ্বাস দিচ্ছে। অথচ কর্মজীবী নারীদের বেশির ভাগই এখন কর্মহীন। তাঁদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশটির সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ২৭ শতাংশের বেশি ছিলেন নারী। সেসব জায়গায় এখন পুরুষদের নেওয়া হচ্ছে। এমনকি তালেবানের মন্ত্রিসভায় কোনো নারী রাখা হয়নি। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়টির নামফলক মুছে ইতিমধ্যে বসানো হয়েছে নীতিনৈতিকতা-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নামফলক। তালেবানের আগের আমলে নীতিনৈতিকতা-বিষয়ক মন্ত্রণালয় ছিল। তখন এই মন্ত্রণালয় তালেবানের কট্টর ধর্মীয় মতাদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করেছিল।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল। তখন তারা মেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। নিষিদ্ধ করেছিল নারীদের চাকরি। এবার তারা প্রাথমিক শ্রেণি পর্যন্ত সব শিশুর স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিলেও এর ওপরের ক্লাসে মেয়েদের পড়াশোনা নিষিদ্ধ করেছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েরা স্কুলে যেতে পারলেও সেখানেও মেয়েশিশুদের ঝরে পড়ার হার উল্লেখ করার মতো।

তালেবান কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিনা মূল্য নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা পরিবহনব্যবস্থা করা গেলেই মেয়েরা স্কুলে ও নারীরা কর্মক্ষেত্রে ফিরতে পারবে।

লিঙ্গভিত্তিক এ বৈষম্য নারী ও মেয়েদের পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার পাশাপাশি দারিদ্র্যের দিকেও নিয়ে যাচ্ছে। গত দুই দশকে শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৬৫ শতাংশ। গত বছরের এক হিসাবে দেখা গেছে, ৯৫ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৯ শতাংশই ছিল মেয়ে। আবার কবে এই মেয়েরা স্কুলে ফিরতে পারবে বা আদৌ ফিরতে পারবে কি না, সেসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা।

গত ৩ ডিসেম্বর তালেবান এক বিশেষ ডিক্রি জারি করে। সেখানে বিয়েতে মেয়ের সম্মতি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। আর বিধবা নারীর স্বামীর সম্পত্তিতে অধিকার রয়েছে বলে বলা হয়। এ উদ্যোগ সাধুবাদ পেলেও দেশটির নারীদের সামনে তৈরি করে দেওয়া পাহাড়সম সমস্যার তুলনায় এটা কতটুকুই–বা। অথচ ডিক্রিতে বাল্যবিবাহের বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই।

ইউনিসেফের (নভেম্বর ২০২১) তথ্যমতে, ১৫-৪৯ বছর বয়সী আফগান নারীদের মধ্যে ২৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই। আর করোনা মহামারি, খাদ্যসংকট, প্রচণ্ড ঠান্ডা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এ সংখ্যা বেড়েছে।

গত নভেম্বরে তালেবান নারী সাংবাদিকদের নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করার আহ্বান জানায়। পাশাপাশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে নারীদের অভিনয় না দেখানোর নির্দেশ দেয়। ক্ষমতা দখলের পর নারী অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিলেও এর কোনো লক্ষণ এখনো দেখা যায়নি।

জারা নবি একজন ব্রডকাস্ট সাংবাদিক ও নারীদের জন্য তৈরি অনুষ্ঠানের টেলিভিশন চ্যানেল বান্নো টিভির সহপ্রতিষ্ঠাতা। তিনি আল–জাজিরাকে বলেন, সব গণমাধ্যম এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। ৫০ জন নারী এই চ্যানলে কাজ করতেন। এখন বেশির ভাগ ক্রু সদস্য চলে গেছেন। কিন্তু নবি তাঁর কাজটি চালিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছি। বোরকার ভেতরে থেকে কাজ করতে হচ্ছে।’

তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর আগফানিস্তানে ৪৩ শতাংশ গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে। ৬ হাজার ৪০০ জনের বেশি সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন। আর নারী কর্মীদের চাকরি হারানোর হার ৮৪ শতাংশ। রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) এবং আফগান ইনডিপেনডেন্ট জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইজেএ) করা প্রতিবেদনে এ তথ্য ওঠে আসে।

শুধু পড়াশোনা করা যাবে না, চাকরি করা যাবে না এমনটা নয়—এখন নারীরা একা দূরের পথে যেতে পারবে না। সম্প্রতি তালেবানের এক নির্দেশে বলা হয়, কোনো নারী সড়কপথে ৪৫ মাইল (৭২ কিলোমিটার) দূরত্ব বা এর বেশি যেতে চাইলে পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন পুরুষ সদস্যকে সঙ্গে থাকতে হবে।

এই নির্দেশের প্রতিক্রিয়ায় বিবিসিকে কাবুলের বাসিন্দা ফাতিমা বলেন, এর অর্থ হলো, ‘আমি স্বাধীনভাবে কোথাও যেতে পারব না। আমি বা আমার সন্তান যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে আর স্বামী যদি সে সময় কাছে না থাকেন, আমি কী করব?’ তিনি আরও বলেন, ‘তালেবান আমাদের কাছ থেকে সুখ কেড়ে নিয়েছে...আমি আমার স্বাধীনতা আর সুখ দুটিই হারিয়েছি।’

তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল–জাজিরা, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, দ্য হিন্দু