মিয়ানমার-থাইল্যান্ড মহাসড়ক 'পরিবেশ বিপর্যয়কারী'

মিয়ানমারের গোষ্ঠীভিত্তিক এবং কিছু পরিবেশ সংগঠন থাইল্যান্ডের সঙ্গে দেশটির প্রস্তাবিত সংযোগ মহাসড়ককে ‘পরিবেশগত এবং সামাজিক বিপর্যয়কারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তারা বলেছে, এই সড়ক হলে স্থানীয় আদিবাসীরা তাদের বসতবাড়ি ও জমি হারাবে।

এই প্রকল্পের বিরোধিতাকারী ব্যক্তিরা বলছেন, গত জুন মাসে এই প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। তবে ওই প্রতিবেদনে প্রকল্পের ফলে যারা জমি ও বসতবাড়ি হারাবে, সেই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ফান্ড ফর নেচারের (ডব্লিউডব্লিউএফ) মিয়ানমার শাখার পরিচালক ক্রিস্টি উইলিয়ামস বলেন, ‘এ সড়ক হলো পরিবেশ ও সামাজিক বিপর্যয়ের সড়ক।’

প্রস্তাবিত সড়কটি দুই দেশের জন্য কৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়ক হলে মিয়ানমারের একটি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং থাওয়ে শহরের কাছে পরিকল্পিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) সঙ্গে থাইল্যান্ডের সরাসরি যোগাযোগ হবে। দক্ষিণ এশিয়ার বাজারের একটি প্রবেশদ্বার হতে পারে এই শিল্পাঞ্চল। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে ট্রাকে পণ্য পরিবহন সহজতর হবে। মালাক্কা প্রণালি ধরে আর জাহাজে পণ্য পরিবহন করতে হবে না।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, এই সড়কের ৫৫০ গজের মধ্যে যেসব মানুষের বসতি আছে, পরিবেশগত প্রভাব নিরীক্ষণ প্রতিবেদনে শুধু তাদের ক্ষতিই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে এই সড়কের প্রভাব আরও দূরের মানুষের ওপরও পড়বে।

ক্রিস্টি উইলিয়ামস বলেছেন, যেসব মানুষ এই সড়কের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তাদের সঙ্গে তাঁদের সংগঠন কাজ করছে। তারা মিয়ানমার সরকারকে এই সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু নতুন সুপারিশ দেবে। এসইজেড নির্মাণকারী থাইল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মিয়ান্দওয়াই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের কাছেও এসব সুপারিশ তুলে ধরবে।

মিয়ানমারের থাওয়ের একটি নাগরিক সংগঠন থাওয়ে ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক থাইন্ট সিন বলেন, এই সড়কের প্রভাব নিরূপণের সময় স্থানীয় মানুষের মতামত যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের দিক হলো এর ফলে জোর করে স্থানীয় আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হবে। এতে পরিবেশগত দূষণ হবে। বাড়বে ভূমি দখল। প্রকল্প এলাকায় বড় ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে।’

এ বিষয়ে বার কয়েক চেষ্টা করেও মিয়ানমারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মিয়ান্দওয়াই ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের মুখপাত্র গুন বুনচান্দ্রনন বলেন, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের নিজস্ব আইনেই প্রকল্পের প্রভাবগত সমীক্ষা করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রকল্প শুরুর আগে স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় কেউই কোনো উদ্বেগের কথা বলেননি।

আবার সশস্ত্র সংঘাতের আশঙ্কা
মিয়ানমারের প্রকল্প এলাকার স্থানীয় লোকজনের আশঙ্কা, এই মহাসড়কের ফলে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সবচেয়ে পুরোনো সশস্ত্র সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের (কেএনইউ) আবার সংঘাত শুরু হতে পারে। মানবাধিকার সংগঠন আর্থরাইটস ইন্টারন্যাশনালের বেন হার্ডম্যান বলেন, প্রকল্পটির প্রভাব নিরূপণ প্রতিবেদনে এই আশঙ্কার বিষয় এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

২০১২ সালে কেএনইউ মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে অস্ত্রবিরতি চুক্তি করে। এর ফলে ছয় দশক ধরে চলা সশস্ত্র লড়াইয়ের অবসান হয়। ২০১৫ সালে দলটি অন্য আরও সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে জাতীয় অস্ত্রবিরতি চুক্তি করে। তবে সরকারের সঙ্গে এই গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। কেএনইউয়ে সাধারণ সম্পাদক সো তা দো মু বলেন, ‘জাতীয় অস্ত্রবিরতি চুক্তি অনুযায়ী কোনো গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় যেকোনো উন্নয়নকাজের আগে এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। তবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বা মিয়ানমার সরকার কেউই আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।’

সো তা দো মু বলেন, ‘আমি বলছি না যে আবার কোনো সংঘাত হবে। তবে এই জাতীয় অস্ত্রবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন।’