মিয়ানমারের নববর্ষ উপলক্ষে ১ হাজার ৬০০–র বেশি কারাবন্দীর জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সেনা সরকার। এর মধ্যে ৪২ জন বিদেশি কারাবন্দীও আছেন। খবর রয়টার্সের।
মিয়ানমারের সেনা সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব লেফটেন্যান্ট জেনারেল অং লিন দোয়ে স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৪২ জন বিদেশি বন্দীসহ ১ হাজার ৬২৯ কারাবন্দীকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্তি দেওয়া হচ্ছে।’
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের নেতা ও নোবেলজয়ী অং সান সু চি এবং তাঁর অস্ট্রেলীয় অর্থনৈতিক উপদেষ্টা শন টারনেলও আছেন। সু চিকে রাজধানী নেপিডোর একটি স্থানে বন্দী রাখা হয়েছে। আর শন টারনেল বন্দী আছেন ইয়াঙ্গুনের ইনসেইন কারাগারে। বন্দীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার খবরে রোববার স্বজনেরা ইনসেইন কারাগারের সামনে ভিড় করেছেন। ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় প্রতিনিধি রয়টার্সকে বলেন, এখন পর্যন্ত ইনসেইন কারাগার থেকে কোনো রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
গত বছর বন্দীদের বার্ষিক সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় ২৩ হাজার বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সে তুলনায় এবারের সংখ্যাটা কম।
অ্যাসিস্টেন্স অ্যাসোসিয়েশন অব পলিটিক্যাল প্রিজনারসের (এএপিপি) হিসাব অনুসারে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর কমপক্ষে ১৩ হাজার ২৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া হামলা, দমন-পীড়ন ও বিক্ষোভে গুলিতে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৭৫৬ জন।
কারাগারের সামনে বন্দী স্বজনের নাম প্ল্যাকার্ডে লিখে অপেক্ষা করছে পরিবারগুলো। আট মাস আগে গ্রেপ্তার হওয়া ২২ বছর বয়সী সন্তানের জন্য ইনসেইন কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছেন এক মা। সন্তান তাঁকে জানিয়েছেন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণায় ছাড়া পেতে পারেন তিনি। অপেক্ষারত সেই মা নিরাপত্তা শঙ্কায় তাঁর নাম প্রকাশ করেননি।
ইনসেইন কারাগারের সামনে আরও এক মাকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। জান্তার বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন করায় জুনে গ্রেপ্তার হয়েছে তাঁর সন্তান। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে যখনই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে, তখনই ছেলের মুক্তির আশায় কারাগারের সামনে অপেক্ষা করেছেন তিনি। এই মা বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে ওকে আজ ছেড়ে দেবে।’ প্রতিশোধমূলক আক্রমণের আশঙ্কায় ওই মা-ও তাঁর নাম প্রকাশ করেননি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসে সামরিক জান্তা। এর পর থেকে দেশটিতে শুরু হয় সামরিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।