মিয়ানমারে সংকট সমাধানে বিবৃতি নিয়ে ঐকমতে৵ ব্যর্থ নিরাপত্তা পরিষদ

মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে
ফাইল ছবি: রয়টার্স

মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে দেশটির চলমান সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নিতে চাপ দেওয়ার লক্ষ্যে একটি বিবৃতিতে একমত হতে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। গতকাল শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদে বিবৃতিটি উত্থাপন করা হয় বলে জানান কূটনীতিকেরা।

চীন এবং যুক্তরাজ্য ওই বিবৃতিটির খসড়া তৈরি করেছিল। তবে এই দুই দেশ দিনব্যাপী আলোচনার ব্যর্থতার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে। গতকাল সকালে মিয়ানমার ইস্যুতে রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি শুরু হয়। যুক্তরাজ্য বলছে, চীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল বলেই আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে।

আর চীনের জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলের একজন মুখপাত্র বলেন, আলোচনা শেষে সমঝোতায় পৌঁছাতে যে ‘সামান্য মতপার্থক্য’ ছিল, সেটি ‘কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব ছিল না।’
নিরাপত্তা পরিষদ সংকটের অবসানের জন্য একটি পাঁচ দফা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ‘সীমিত অগ্রগতি’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পরিকল্পনাটি এক বছরেরও বেশি আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সংগঠন (আসিয়ান) প্রস্তাব করেছিল।

চীনের ওই প্রতিনিধি জানান, শুক্রবারের আলোচনায় চীন ‘সীমিত অগ্রগতি’র পরিবর্তে ‘ধীর অগ্রগতি’ শব্দটি ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত শব্দ বাস্তবসম্মত ছিল। কিন্তু কম সংবেদনশীল ছিল। “এটি সত্যি লজ্জা”র যে আমরা কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারিনি।’

বিবৃতিতে, মিয়ানমারে অব্যাহত সহিংসতা এবং মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদের উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়েছে।

গত এক বছরের বেশি সময় ধরে জান্তা শাসনে মিয়ানমারে রক্ত ঝরেছে প্রচুর। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে জান্তাবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ, বিশেষত তরুণদের প্রতিবাদ, রক্তপাত মিয়ানমারকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অনেকে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন।

দেশটির একটি মানবাধিকার সংগঠনের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, মিয়ানমারে প্রথম এক বছরের সংঘাতে ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই জান্তাবিরোধী। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি–হামলায় তাঁরা প্রাণ হারান। এক বছরে দেশটিতে গ্রেপ্তার হয়েছেন ১১ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ। আর জান্তার হিসাবে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মিয়ানমারে ১৬৮ সেনা ও পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, মিয়ানমারের এখনকার পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধে রূপ নিচ্ছে। সংঘাতকবলিত দেশটিতে শান্তি ফেরাতে ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।