মিয়ানমারে সামরিক শাসনবিরোধী প্রায় দুই মাসের বিক্ষোভে মৃত্যুসংখ্যা সাড়ে পাঁচ শ ছাড়িয়েছে। অধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি) এই তথ্য জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
এএপিপি জানায়, নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৫৫৭ হয়েছে। গ্রেপ্তার বা আটক ব্যক্তির সংখ্যা আড়াই হাজারের বেশি।
মিয়ানমারে স্বৈরশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র-মানবাধিকারের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে এএপিপি।
সেনা কর্তৃপক্ষের ব্যাপক দমন-পীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ সত্ত্বেও আন্দোলনকারীরা প্রতিদিনই মিয়ানমারের রাস্তায় নামছেন। তাঁরা সেনাশাসন প্রত্যাখ্যান করছেন। দিনের বেলায় তো বটেই, আন্দোলনকারীরা রাতেও প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন।
মিয়ানমারে সেনাশাসনবিরোধীরা তাঁদের প্রতিবাদের অংশ হিসেবে আজ ইস্টার সানডেতে ‘ইস্টার এগ’ তৈরি করেছেন। এই ‘ইস্টার ডিম’ সেনাশাসনের প্রতি অবজ্ঞা-অবহেলা প্রদর্শনের প্রতীক।
আন্দোলনকারীরা গত রাতে প্রতিবাদী মোমবাতি প্রজ্বালনের পর অনলাইনে ইস্টার ডিমের ছবি পোস্ট করেছেন। ছবির সঙ্গে তাঁরা জুড়ে দিয়েছেন সেনাশাসনবিরোধী নানা স্লোগান।
মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথে বিক্ষোভের পাশাপাশি ধর্মঘট-অসহযোগের মতো আন্দোলন চলছে। বিক্ষোভকারীরা ব্যতিক্রমধর্মী নানান প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন। ‘ইস্টার এগ’ তেমনই একটা ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ।
ডিমের ওপর যেসব স্লোগান লেখা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—‘আমরা অবশ্যই জয়ী হব’, ‘বসন্ত বিপ্লব’, ‘বিদায় হও এমএএইচ (সেনাপ্রধান)’ ইত্যাদি।
মিয়ানমারেরর সেনা কর্তৃপক্ষ দেশটিতে তথ্যের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করতে নানান কৌশল অবলম্বন করেছে। তারা বিশেষ করে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করছে। গত শুক্রবার তারা ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সেবা বন্ধ করে দিতে নির্দেশ দেয়।
সামরিক শাসনের বিরোধিতা করায় প্রায় ৪০ জন সেলিব্রিটিকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। এই দলে সামাজিক মাধ্যম তারকা, সংগীতশিল্পী, মডেল রয়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে মতবিরোধ প্ররোচিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই অভিযোগে তাঁদের সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান হয়। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। সেনাবাহিনী মিয়ানমারে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর সেখানে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সেনা কর্তৃপক্ষ সহিংস ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করে।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী দমন-পীড়নের মুখেও দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা টানা বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বিক্ষোভকারীরা দেশবাসীর প্রতি জান্তার বিরুদ্ধে ‘গেরিলা কায়দায় প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দা-সমালোচনার ঝড় বইছে। মিয়ানমারের জান্তার ওপর নিষেধাজ্ঞাসহ নানাভাবে চাপ বাড়িয়ে চলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।