মিয়ানমারে চলমান সেনাশাসনের অবসান ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ‘ছায়া সরকার’ গঠন করেছে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সংসদ সদস্যদের জোট। এ ছায়া সরকারে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) পাশাপাশি দেশটির ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর রাজনীতিকেরা রয়েছেন। তাঁরা আত্মগোপনে থেকে এ ছায়া সরকার পরিচালনা করবেন ও জান্তাবিরোধী কার্যক্রম এগিয়ে নেবেন বলে জানানো হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ নামে ছায়া সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় কমিটি রিপ্রেজেন্টিং পাইদাউংসু হ্লুতাউ (সিআরপিএইচ)। সিআরপিএইচ গঠিত হয়েছে মূলত এনএলডি আইনপ্রণেতাদের নিয়ে। গত বছর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয় পেলেও গত ১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের কারণে ক্ষমতায় বসতে পারেননি তাঁরা। রয়েছেন আত্মগোপনে।
সিআরপিএইচের নেতা মিন কো নাইং জানিয়েছেন, নতুন ছায়া সরকারে ক্ষমতা হারানো স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট নিজ নিজ পদে রয়েছেন। অভ্যুত্থানের পর থেকে দুজনই কারাবন্দী রয়েছেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কাচিনদের একজন প্রতিনিধি ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কারেনদের প্রতিনিধি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
জান্তাবিরোধী ছায়া সরকারের মন্ত্রিসভায় চিন, মন, শানি, কারেনি, তাংসহ আরও কয়েকটি জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মিন কো নাইং। ১০ মিনিটের ভিডিও বার্তায় ‘জনগণের এ সরকারকে’ অভিনন্দন জানানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ছায়া সরকারে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রাজনীতিকদের এক ছাতার নিচে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
নবগঠিত ছায়া সরকারের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য থাকবে আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করা, বলেছেন সিআরপিএইচের প্রভাবশালী নেতা ও ছায়া সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতাবিষয়ক মন্ত্রী ড. সাসা। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা জুয়ান গুইদোকে দেশটির বৈধ নেতা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। আমরাও আন্তর্জাতিক সমর্থন ও স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করব।’
তবে ছায়া সরকার গঠনের বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানতে জান্তার প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি। যদিও জান্তা সরকার সিআরপিএইচের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের ‘উচ্চপর্যায়ের বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আগেই। তাঁদের অনেকের নামে জারি করা হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা।
১ ফেব্রুয়ারির সেনা অভ্যুত্থানের কয়েক দিন পর থেকেই জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল রয়েছে পুরো মিয়ানমার। বিক্ষোভকারীদের দাবি সুষ্পষ্ট, সেনাশাসন প্রত্যাহার এবং সু চিসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি। দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে দেশটিতে জান্তা সেনা-পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত শিশুসহ সাত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্স (এএপিপি)। আটক হয়েছেন সাংবাদিক, শিল্পীসহ তিন সহস্রাধিক বিক্ষোভকারী।