মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান ফেসবুক পেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আজ রোববার এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে সেনা-পুলিশের গুলিতে দুজন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পরদিন দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান ফেসবুক পেজ সরিয়ে দেওয়া হলো।
গতকাল শনিবার দেশটির মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায় সেনা ও পুলিশ। গুলিতে দুজন নিহত হন। অহত হন অন্তত ২০ জন। গতকালের এই সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তারা একে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেছে।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভে সবচেয়ে সহিংস ও রক্তক্ষয়ী দিন ছিল গতকাল। তার আগের দিন শুক্রবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত এক নারী বিক্ষোভকারী মারা যান। মিয়ানমারে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে সেটাই ছিল প্রথম মৃত্যুর ঘটনা। ২০ বছর বয়সী মিয়া থোতে থোতে খায়ং নামের ওই নারী বিক্ষোভকারী ৯ ফেব্রুয়ারি নেপিডোতে সেনা শাসনবিরোধী বিক্ষোভকালে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।
ফেসবুকের এক মুখপাত্র বলেন, তাঁদের বৈশ্বিক নীতিমালা অনুযায়ী, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘তাতমাদো ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিম’ নামের পেজটি ফেসবুক থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সহিংসতায় উসকানি ও ক্ষতি সংগঠনের বিষয়ে ফেসবুকের নীতিমালা বারবার লঙ্ঘন করায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজটির বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ‘তাতমাদো’ নামে পরিচিত। আজ রোববার তাদের ‘ট্রু নিউজ ইনফরমেশন টিম’ নামের পেজটি আর ফেসবুকে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রয়টার্স। তবে মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষ ফোনকলে সাড়া দেয়নি।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শত শত পেজ নিষিদ্ধ করে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিদ্বেষপ্রসূত ও ভুয়া পোস্টের বিষয়ে ফেসবুকের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে তীব্র সমালোচনার পর তারা পদক্ষেপ নেয়।
২০১৮ সালে ফেসবুক মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংকে নিষিদ্ধ করে। তাঁর নেতৃত্বেই মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান হয়।
গত বছরের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে দেশটির সেনাবাহিনী–সংশ্লিষ্ট অন্তত ৭০টি ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় ফেসবুক।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল এনএলডি বিপুল জয় পায়। কিন্তু এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলে সেনাবাহিনী। তারা পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে ১ ফেব্রুয়ারি ভোরে সামরিক অভ্যুত্থান করে। সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনী সু চির সরকার উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। একই সঙ্গে তারা সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের আটক-গ্রেপ্তার করে। এদিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে টানা বিক্ষোভ করছেন দেশটির মানুষ। ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বিক্ষোভ চলছে। গতকাল গুলিতে হতাহতের ঘটনার পর আজ রোববারও বিক্ষোভ করছেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থীরা। ইতিমধ্যে হাজারো বিক্ষোভকারী দেশটির বিভিন্ন শহর-নগরের রাজপথে নেমেছেন।
বিক্ষোভ দমাতে সামরিক জান্তা কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ, দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তারের মতো পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। আজ ভোরে মিয়ানমারের পুলিশ পরোয়ানাভুক্ত এক জনপ্রিয় অভিনেতা ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস জানিয়েছে, মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের জেরে এখন পর্যন্ত ৫৬৯ জনকে আটক বা গ্রেপ্তার করেছে সামরিক জান্তা।
সামরিক শাসনবিরোধীরা রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি অসহযোগ পালন করছে। সরকারি কর্মচারীদের অসহযোগে অনেক অফিস কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।