মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান ও তিন শীর্ষ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গাবিরোধী যে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান, তার জবাবদিহিও করতে হবে মিয়ানমারকে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুই বছর আগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সহিংস আচরণ করেছে মিয়ানমার—এমন প্রমাণ পাওয়ার পরই সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময় জীবন বাঁচাতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যায় ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। বাকি তিন শীর্ষ কর্মকর্তা হলেন সেনাবাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ইন চিফ সো উইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থান ও এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আং আং। এই চারজনের পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারবেন না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, এই ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে পদক্ষেপ নিল। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে মিয়ানমার সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
আজ বুধবার বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের ওপর যে যুক্তরাষ্ট্র হতাশ—এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হলো। এর আগে গত বছরের আগস্টে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে দেশটির তিন সেনা কর্মকর্তা, এক সীমান্ত পুলিশ কমান্ডারসহ দুটি সামরিক ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গা গণহত্যার মূল হোতা হিসেবে পরিচিত। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বেপরোয়া অভিযানের মুখে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এই নির্যাতনের ঘটনাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। ওই সময় সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং দাবি করেছিলেন, তাঁর বাহিনী মোটেই বাড়াবাড়ি করেনি। মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গাবিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রোহিঙ্গাদের তিনি ‘বাঙালি’ হিসেবেও অভিহিত করেন। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চান যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক। এ জন্য গত বছরের আগস্টে সেনাপ্রধানের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়। রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিচারের আওতার আনতে জাতিসংঘের আহ্বানের পর ফেসবুক ওই পদক্ষেপ নেয়।