মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ হঠাৎ পদত্যাগের পরই উপপ্রধানমন্ত্রী ড. ওয়ান আজিজা ওয়ান ইসমাইল মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছে। মাহাথির মোহাম্মদ গতকাল সোমবার পদত্যাগ করার পর তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় শুরু হয়েছে।
ড. ওয়ান আজিজা ওয়ান আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী। তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পাবে মালয়েশিয়া।
বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে পর্দার আড়ালে একটি সরকার গঠনের চেষ্টা ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। এরপরই অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ড. ওয়ান আজিজা ওয়ানকে মাহাথির মনোনীত করেছেন বলে দেশটির একটি গণমাধ্যমের খবর বের হয়। তবে এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ হঠাৎ পদত্যাগ করেন। সোমবার মাহাথিরের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন দেশের রাজা আবদুল্লা অব ফাহাং। এরপরই রাজার সঙ্গে দেখা করেন আনোয়ার ইব্রাহিম ও তাঁর স্ত্রী ড. ওয়ান আজিজাহ। রাজার সঙ্গে দেখা করে আসার পরেই ওয়ান আজিজাহ মালয়েশিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে।
তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরকে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন রাজা।
গত শনিবার পদত্যাগ করার পর রাতে আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাহাথির। এরপরই নতুন সরকার গঠন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্য দফায় দফায় বৈঠক ও ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙনের গুঞ্জন চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে সোমবার দুপরে আনোয়ার ও তাঁর স্ত্রী রাজার সঙ্গে দেখা করার পর সেই জল্পনা নুতন রূপ নেয়। হাওয়া অন্যদিকে বইতে শুরু করে। দেশটির একটি সংবাদমাধ্যম ওয়ান আজিজাহ পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন বলে খবরও প্রকাশ করেছে। তবে নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন, সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। সূত্র বলেছে, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আনোয়ার ইব্রাহিম যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারেন, সে জন্য রাজনৈতিক মিত্ররা নতুন জোট গঠনের জন্য আহ্বান জানালে এ পদক্ষেপ নেন মাহাথির।
মাহাথির ও আনোয়ার এই বন্ধু, তো এই শত্রু
মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ ও আনোয়ার ইব্রাহিমের অম্লমধুর সম্পর্কটা কয়েক দশকের। দুজন দুজনার এই বন্ধু, তো এই শত্রু। স্বেচ্ছা অবসর থেকে রাজনীতিতে ফিরে ২০১৮ সালে নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির। সেই ভোটে সমর্থন পেয়েছিলেন আনোয়ারের। এরপর মাহাথির কথা দিয়েছিলেন, আনোয়ারের হাতেই শিগগির ক্ষমতা তুলে দেবেন। সবার ধারণ ছিল, সে মতোই এগোচ্ছে সব। কিন্তু সোমবার আচমকা পদত্যাগ করে বসেছেন মাহাথির। এতে সব ভজকট পাকিয়ে গেল।
মাহাথির এখন বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী (৯৪)। ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তখন একসময় মাহাথিরের উপপ্রধানমন্ত্রী ছিলেন আনোয়ার। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ার অজুহাতে আনোয়ারকে বরখাস্ত করেন মাহাথির। এরপর তাঁর কারাদণ্ড হয় দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগে। সমালোচকদের মতে, এর পেছেন মাহাথিরের হাত ছিল।
অবসর ভেঙে ২০১৮ সালে আবার রাজনীতিতে ফেরেন মাহাথির। নিজের দলের নেতা দুর্নীতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেই আনোয়ারের সঙ্গেই ‘পাকাতান হারাপান’ নামে জোট করে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসেন মাহাথির। ওই সময় তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি আনোয়ারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু পরে গড়িমসি শুরু করেন। ফলে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়সীমা নির্ধারণে চাপ দিচ্ছিলেন আনোয়ার। এই পরিস্থিতিতে গতকাল পদত্যাগের আগে পাকাতুন হারাপান জোটের এবং বিরোধী জোটের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন মাহাথির। সূত্র বলেছে, আনোয়ারকে বাইরে রেখে নতুন সরকার গঠনের জন্য এ বৈঠক করেছেন তিনি।
নিজ দল থেকেও পদত্যাগ করেছেন মাহাথির
গতকাল নিজের রাজনৈতিক দল মালয়েশিয়ান ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস পার্টি থেকেও পদত্যাগ করেছেন মাহাথির। তাঁর পদত্যাগের আগেই ‘পাকাতান হারাপান’ জোট ছাড়ে দলটি। সেই সঙ্গে আনোয়ারের দলের ১১ জন আইনপ্রণেতাও পদত্যাগ করেছেন। ফলে নতুন সরকার গঠন নিয়ে নাটকীয়তা আরও বাড়ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে চাইবেন তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠ ১২২ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন পেতে হবে। মাহাথিরকে ক্ষমতায় ফিরতে হলে পাকাতান হারাপান জোটের বাকিদের যেমন সমর্থন লাগবে, তেমনি অন্য আইনপ্রণেতাদেরও সমর্থন লাগবে। এই জন্য তাঁকে বিরোধীদের সঙ্গে নতুন জোট করতে হবে। আর কোনো পক্ষই যদি তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারে তবে নতুন নির্বাচনের ডাক দেবেন রাজা। তথ্যসূত্র: এএফপি, রয়টার্স ও মালয়ে মেইল