মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান নেওয়া মার্কিন রণতরিতে সহজেই আঘাত হানতে পারবে বলে দাবি করেছে ইরান। পুরো পরিস্থিতিকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’ ও ‘রাজনৈতিক খেলা’ বলেও মন্তব্য করেছে দেশটি।
আজ শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার অবজ্ঞার সঙ্গে ইরান বলেছে, মার্কিন রণতরিতে তারা সহজেই আঘাত হানতে পারবে। কয়েক দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে শক্তির আস্ফালন চলছে। ইরানের শীর্ষ কূটনীতিকেরা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে কাজ করছেন। পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করা দেশগুলোর মধ্যে নিজেদের অবস্থান ফিরে পেতে কাজ করছে দেশটি।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করা ছয়টি দেশের মধ্যে বছর খানেক আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় এবং দেশটির ওপর অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করে। এই সপ্তাহের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বাগদাদ দূতাবাস থেকে তাদের কয়েকজন কর্মীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইরান হামলা চালাতে পারে—নিজ দেশের এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ সতর্কতা নিয়েছে। ইরানের উদ্দেশে রণতরি নিয়ে লোহিত সাগরের সুয়েজ খালে অবস্থান নিয়েছে মার্কিন নৌবহর। তবে বরাবরই মার্কিন ওই গোয়েন্দা তথ্যকে ভুয়া বলে দাবি করেছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শাখা দ্য ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসকে (আইআরজিসি) জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
আর এই আইআরজিসির পার্লামেন্টবিষয়ক ডেপুটি কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালেহ জোকার যুক্তরাষ্ট্রের রণতরির ওপর সহজেই ইরানের হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন। বার্তা সংস্থা ফারসের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মোহাম্মদ সালেহ জোকার বলেছেন, ‘এমনকি আমাদের স্বল্প দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্রও মার্কিন রণতরিতে সহজে আঘাত হানতে পারবে। নতুন যুদ্ধের খরচ চালানোর সাধ্য নেই যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটি এখন জনশক্তি ও সামাজিক অবস্থানের দিক দিয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, তাঁরা ‘ফোনের পাশেই বসে’ রয়েছেন। অথচ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাব গ্রহণ করার ইচ্ছে প্রকাশ করে কোনো বার্তা আসছে না ইরানের তরফ থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা অল্প কিছু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মনে করি, তাদের (ইরান) সমঝোতায় আসা উচিত।’
ইরানের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আবদলরাহিম মওসাভি হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘যদি শত্রু হিসাব-নিকাশে ভুল করে, তবে তারা যে জবাব পাবে, তা তাদের (শত্রু) জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনবে।’
ইরানের পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রধান ও জ্যেষ্ঠ আইনপ্রণেতা হেশমাতোল্লাহ ফালাহাতপিশেহ টুইটারে বলেছেন, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু তৃতীয় একটি পক্ষের পৃথিবীর বড় অংশ ধ্বংসের তাড়া রয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। এই উত্তেজনা কমাতে দুই পক্ষের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি ‘রেড ডেস্ক’ ইরাক বা কাতারে বসানো উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ট্রাম্প মনে করেন, ইরানের ওপর অর্থনৈতিক চাপ দেশটিকে পারমাণবিক ইস্যু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ গ্রহণে বাধ্য করবে। পাশাপাশি ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেন যুদ্ধে দেশটির সমর্থন দেওয়া বন্ধ হবে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ জাপান ও চীন সফরে গিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং পারমাণবিক চুক্তিতে সই করা বাকি দেশগুলোকে শুধু ‘বিবৃতি’ না দিয়ে চুক্তি অনুসারে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন।