বাঙালির বৈশাখ, অসমিয়াদের বহাগ। আর এই বহাগকে আহ্বান জানাতে অসমিয়ারা এখন থেকেই প্রস্তুত তাঁদের রঙালি বিহুর ডালি নিয়ে। বিহু অসমিয়াদের মূল সংস্কৃতি, প্রাণের উৎসব। আজও রয়েছে প্রাক্-বিহুর অনুষ্ঠান।
ইংরেজির ১৪, ১৫ ও ১৬ এপ্রিল গোটা আসাম মেতে উঠবে রঙালি বিহুর ছন্দে।
এবার ভোটের উত্তেজনা রয়েছে। আসামে ভোট ১১, ১৮ ও ২৩ এপ্রিল। গোটা রাজ্যেই এখন নির্বাচনী ব্যস্ততা। কিন্তু এর মধ্যেও নিজেদের কৃষ্টির প্রতি সচেতন অসমিয়ারা বিহুর প্রস্তুতিতে মোটেই পিছিয়ে নেই।
রাজধানী গুয়াহাটি থেকে শুরু করে গোটা রাজ্যেই কান পাতলে এখন শোনা যায় বিহুর সুর। স্কুল-কলেজে চলছে বিহুর প্রস্তুতি। বিহুর ছন্দে নাচতে প্রস্তুত অসমিয়া সুন্দরীর দল। আর পুরুষেরা ব্যস্ত ঢোলে বোল তুলতে।
রঙালি বিহু আসলে রঙ–তামাসার উৎসব। পাহাড়ের কোলে কৃষিতে যাওয়ার আগে তরুণ-তরুণী মেতে উঠতেন প্রেম নিবেদনে। সেখান থেকেই প্রকৃতির নিয়মে সুরেলা বিহুর সৃষ্টি।
কেতু বিহু বা কার্তিক বিহু হয় ফের ফসল বোনার সময়। কার্তিককে আবাহন করতে কৃষিই হয় তখন মুখ্য বিষয়।
মাঘকে বরণ করা হয় পৌষসংক্রান্তিতে ভোগালি বিহুতে। পিঠে-পুলি ও বারোয়ারি ভোজনই ভোগালির আসল উপকরণ।
এখন হচ্ছে আসল বিহু। নামে তিন দিনের হলেও চলে মাস ভর। বিহুর ছন্দে মেতে ওঠে শহুরে নতুন প্রজন্মও। পাছড়া পরা নারীরা আর ধুতি পরা পুরুষ উৎসবের মেজাজে মেতে ওঠেন।
বাংলার নববর্ষের মতো বিহুতে কেনাকাটার কমতি নেই। বিহুকে কেন্দ্র করে চলছে মেলা ও উৎসব আয়োজন। চলে চাঁদাবাজিও। অসমিয়াদের সঙ্গে বাঙালিরাও মেতে ওঠেন নিজেদের নববর্ষ পালনের পাশাপাশি বিহুর আনন্দেও।
দোকানে দোকানে চলছে বিহুর সেল। নতুন জামাকাপড়ের পাশাপাশি গামছা কেনাও বিহুর অঙ্গ। জমজমাট গোটা আসাম। বাতাসে যে বেজে উঠেছে বিহুর সুর।
বিশিষ্ট অসমিয়া সাহিত্যিক অনুরাধা পূজারির মতে, বিহু হচ্ছে অসমিয়াদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘নিজেদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি আগলে রাখতে নতুন প্রজন্মও সমান যত্নশীল। কৃষি উঠে গেলেও কৃষ্টি রয়েছে এখনো আমাদের মননে।’
সামাজিক সংস্থা ব্যতিক্রমের সৌমেন ভারতীয়ার মতে, বিহু অসমের গর্ব। অসমিয়া বলে শুধু নয়, আজকাল বাঙালিরাও মেতে ওঠেন উৎসবে। অসমিয়া ও বাঙালির মিলনের উৎসব হয়ে উঠেছে বিহু।
ব্যতিক্রম শনিবার গুয়াহাটিতে আয়োজন করেছে প্রাক্-বিহু সন্ধ্যার। অর্থাৎ আজ থেকেই শুরু হচ্ছে আগাম বিহুর উন্মাদনা। বিহুর ছন্দ ও সুর এখন আকাশে-বাতাসে।