জাতিসংঘের প্রতিবেদন

বিশ্বে ৫০০ কোটি মানুষ পানিসংকটে ভুগবে

জর্ডানের একটি জলাধার শুকিয়ে যাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে সেচকাজ
ছবি: রয়টার্স

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। এই সংকট আগামী কয়েক দশকে আরও খারাপ হতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ পানিসংকটে ভুগতে পারে। বিশ্ব সংস্থা জাতিসংঘের চলতি বছরের পানি উন্নয়ন প্রতিবেদনে এসব তথ্য এসেছে। আজ সোমবার ওই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী তিন দশক ধরে প্রতিবছর বিশ্বে পানির ব্যবহার ১ শতাংশ বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানি সরবরাহের প্রচলিত উৎস খাল ও বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বেড়ে যাবে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা। বতর্মানে বিশ্বের ৯৯ শতাংশ সুপেয় পানি আসে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহব্যবস্থা থেকে। কিন্তু এর গুরুত্ব না বোঝা, প্রতিনিয়ত অবমূল্যায়ন করা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই সরবরাহব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষকেরা বলেছেন, ২০১৮ সালে বিশ্বের প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি মানুষ অন্তত এক মাস পানিসংকটে ভুগেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০০ কোটিতে।

ইউনেসকো কর্তৃক প্রস্তুত করা প্রতিবেদনটির প্রধান সম্পাদক রিচার্ড কনর। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক পানিসংকটের সমাধান যদি আমাদের অজ্ঞাতেই থেকে যায়, তাহলে কেমন হবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে এ থেকে আমরা অনেক সুবিধা পাব।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পানির সরবরাহব্যবস্থায়ও চাপ বেড়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপুল পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিষয়টির ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

ভূগর্ভস্থ পানির কেন এত গুরুত্ব, তার ব্যাখ্যাও জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট পানির মাত্র ১ শতাংশ সুপেয় পানি, যার বেশির ভাগই পাওয়া যায় বরফের তলে। বাকি পানি লবণাক্ত। সুপেয় পানির মান সাধারণত ভালো হয়ে থাকে। কোনো ধরনের শোধন ছাড়াই এ পানি নিরাপদ ও সহজে ব্যবহার করা যায়।

অপর দিকে পৃথিবীর উপরিভাগের পানি সাধারণত খাল-বিল ও লেকে সংরক্ষিত থাকে। এই পানিসম্পদ সীমিত। দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তীব্র খরা দেখা যাচ্ছে। এতে পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে। সে তুলনায় ভূগর্ভস্থ পানির ভবিষ্যৎ অনেকে ভালো। ১০ থেকে ২০ শতাংশ পানি প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় উৎপন্ন হয়। আর এই পানি সহজেই সরু পাইপের মাধ্যমে গভীর থেকে তুলে আনা যায়।

অপর দিকে উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরিতে ভূগর্ভস্থ পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানির এক–চতুর্থাংশই আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। বিশ্ববাসীর দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানির অর্ধেকই সরবরাহ করা হয় ভূগর্ভস্থ পানি থেকে। গ্রামীণ জনপদের মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানির সবচেয়ে সস্তা মাধ্যম এটি। গ্রামের মানুষ সরকারি কিংবা বেসরকারি পানি সরবরাহব্যবস্থায় সঙ্গে জড়িত নয়। তবে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হলে পরিণতি খারাপ হতে পারে। এর ফলে জমি শুকিয়ে পানির সরবরাহ কমে যেতে পারে।

২০১৮ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পানিসংকটের মুখোমুখি হয়েছিল ভারত। দেশটির সরকারি একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ভারতের ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে খাওয়ার পানির নির্ভরযোগ্য কোনো উৎসের সুযোগ থাকবে না।

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে ঘন ঘন খরা হচ্ছে। এ কারণে বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল ভারতের কৃষিকাজে বিঘ্ন ঘটছে। এ ছাড়া দেশটির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বাড়ছে বিরোধ। এর ফলে ফসল উৎপাদনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ মানবসভ্যতা টিকে থাকতে হলে সুপেয় পানির কোনো বিকল্প নেই। আমাদের মাটির নিচে এমন কিছু অদৃশ্য সমাধান লুকিয়ে আছে, যার মাধ্যমে মিলবে এই সংকটের সমাধান।