বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে কতটা চাপে ইমরান

ইমরান খান
 রয়টার্স ফাইল ছবি

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গতকাল মঙ্গলবার অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকারের প্রতি লিখিত আবেদন জানিয়েছে তারা। এর পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে, ইমরান কতটা চাপের মধ্যে আছেন, তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম ডন।

কবে নাগাদ হবে অধিবেশন

পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কায়সারকে এখন ১৪ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। এর মানে হলো ২২ মার্চের মধ্যে অধিবেশন আয়োজন করতে হবে। ২২ মার্চ ইসলামাবাদে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুই দিনের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকের জন্য অ্যাসেম্বলি হল সংস্কার করা হচ্ছে। এমন অবস্থায় উভয়সংকটে পড়েছে সরকার। ইমরান খান ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে আইনি পরামর্শক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।

পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ৩৪২ সদস্যবিশিষ্ট নিম্নকক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের পর স্পিকারকে ভোটাভুটির আয়োজন করতে হবে। প্রস্তাব উত্থাপনের তিন দিন পার হওয়ার পরই কেবল ভোটাভুটি করা যাবে। তবে ভোটাভুটির জন্য সাত দিনের বেশি সময় নেওয়া যাবে না।

সংবিধান অনুযায়ী, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিতে সেখানে কমপক্ষে ৬৮ জন সদস্যের স্বাক্ষর (মোট সদস্যের ২০ শতাংশ) প্রয়োজন হয়। অধিবেশনের ডাক দিতে স্পিকারের কাছে আবেদনের জন্য ন্যূনতম এক–চতুর্থাংশ, তথা ৮৬ সদস্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়। পিএমএল-এনের মুখপাত্র মরিয়ম আওরঙ্গজেবের বরাতে ডন জানিয়েছে, অধিবেশন আহ্বানের জন্য স্পিকার বরাবর লিখিত আবেদনে ১০২ জন স্বাক্ষর করেছেন। আর ইতিমধ্যে অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন ১৫২ জন। ৩৪২ সদস্যবিশিষ্ট নিম্নকক্ষে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাব পাসের জন্য প্রয়োজন হয় ১৭২ ভোটের।

দেশটির সংবিধান অনুযায়ী, অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়ার পর আর প্রধানমন্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিতে পারেন না। বিরোধী দলের এক নেতা ডনকে বলেছেন, ইমরান খান যদি নিজেকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে চান, তবে তাঁর হাতে এখন একটিই উপায় আছে। তা হলো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করা।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

গত বছরের মার্চে সিনেট নির্বাচন নিয়ে হতাশা তৈরি হলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে স্বেচ্ছা অনাস্থা ভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই ভোটাভুটিতে মাত্র ছয় ভোট বেশি পেয়ে টিকে যান ইমরান খান। তিনি তখন ১৭৮ ভোট পেয়েছিলেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান

গতকাল মঙ্গলবার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আসাদ কায়সার সাংবাদিকদের বলেছেন, বিরোধী দলগুলো যে প্রস্তাব জমা দিয়েছে, তা বিবেচনা করবেন তিনি। স্পিকার বলেন, এটি তাদের (বিরোধী দলগুলোর) আইনগত অধিকার। বিধিবিধান, আইন ও সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলে তা তেমনভাবেই বিবেচনা করা হবে।
পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতারা ঐক্যবদ্ধ আছেন কি না, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে আসাদ কায়সার বলেন, পিটিআইয়ের আইনপ্রণেতারা দলের সঙ্গেই আছেন।

মাঝেমধ্যে ব্যতিক্রম দেখা যায়। এটা হওয়া (অনাস্থা ভোট) ভালো, কারণ এর মধ্য দিয়ে পুরো বিষয় পরিষ্কার হয়ে যায়। জোট সরকারের প্রতি এর অন্তর্ভুক্ত অন্য দলগুলোর সমর্থনও বজায় আছে বলে দাবি করেছেন আসাদ।

এদিকে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদ দাবি করেছেন, ওআইসির বৈঠকের পর অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটি হতে পারে। এর জন্য ২৯ মার্চ পর্যন্ত ভোটাভুটি বন্ধ রাখা হতে পারে। বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, স্পিকার ২২ মার্চের মধ্য অধিবেশন ডাকতে পারেন। এরপর ভোটাভুটির জন্য সাত দিন সময় পাওয়া যাবে।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমেদের বিশ্বাস, বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব ব্যর্থ হবে এবং ইমরান খান অনাস্থা ভোটে টিকে যাবেন।

এদিকে, জিও টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সরানোর ব্যাপারে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী বিরোধী দলগুলো। তারা দাবি করেছে, পিটিআইয়ের ২৮ আইনপ্রণেতা এবং সরকারি জোটের আরও কয়েকজন নেতার সমর্থন আছে তাদের সঙ্গে। সব মিলে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ২০২ জন সদস্যের সমর্থন থাকার দাবি করেছে তারা। পিএমএল-এনের প্রতি সমর্থন রয়েছে কমপক্ষে ১৬ জন পিটিআই নেতার, ৪ জনের সমর্থন রয়েছে পিপিপির প্রতি এবং ২ জন সমর্থন করেন জেইউআই-এফকে। ইতিমধ্যে আরও ছয় পিটিআই সদস্য বলেছেন, পিটিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ আছে তাঁদের।