বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের চাকা ও চেয়ার উদ্ধার

সাগরের তলদেশ থেকে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের যাত্রীদের উদ্ধার করা জুতার সারি। ছবি: এএফপি
সাগরের তলদেশ থেকে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের যাত্রীদের উদ্ধার করা জুতার সারি। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের চাকা, চেয়ারসহ অন্যান্য জিনিস সাগরের তলদেশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার আকাশে ওড়ার অল্প কিছু সময় পরই জাভা সাগরে যাত্রী, ক্রুসহ ১৮৯ জনকে নিয়ে বিধ্বস্ত হয় লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ সিরিজের আনকোরা উড়োজাহাজটি। এমন একটি নতুন উড়োজাহাজ কেন দুর্ঘটনার শিকার হলো, তা খতিয়ে দেখতে কর্তৃপক্ষ ব্ল্যাকবক্সের ডেটা বিশ্লেষণ করছে।

আজ শুক্রবার এএফপির খবরে জানানো হয়, ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিভাগের কমান্ডার ইসসোয়ার্তো বলেন, যে স্থানে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেখানে আজ (শুক্রবার) আবার অনুসন্ধান চালানো হবে। সেখানে উড়োজাহাজের প্রচুর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, চাকা ও চেয়ার আছে, যেগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। সেগুলো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে এবং কিছু কিছু স্রোতে ভেসে গেছে। তিনি জানান, ডুবুরিরা ওই স্থানের ২৫-৩৫ মিটার গভীর পর্যন্ত অনুসন্ধান চালাচ্ছেন।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু দেহাবশেষ মৃতদেহ রাখার ব্যাগে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো একজন নিহত যাত্রীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। অন্য যাত্রীদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাঁদের দেহাবশেষ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনায় নিহত অনেক যাত্রীর হদিস এখনো মেলেনি। ধ্বংসাবশেষ থেকে তাঁদের দেহাবশেষ উদ্ধার করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অনেক যাত্রীকে সিটে আটকে থাকা অবস্থায় পাওয়া যেতে পারে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, উড়োজাহাজের একটি ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। ল্যান্ডিং গিয়ারের পাশাপাশি ব্ল্যাকবক্স উড়োজাহাজে স্থাপন করা থাকে। উদ্ধার করা ব্ল্যাকবক্সের মাধ্যমে উদ্ধারকারীরা উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ জানতে পারবেন।
বিমান চালনা–সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্ল্যাকবক্স দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে প্রায় ৯০ শতাংশ তথ্য দিতে পারে। এটা ফ্লাইট ক্রুদের কথোপকথনসহ উড়োজাহাজের গতি, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ও গতিপথের তথ্য রেকর্ড করতে পারে।

বিধ্বস্ত লায়ন এয়ারের বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ উড়োজাহাজটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। ছবি: এএফপি

স্বল্প দূরত্বের এই উড়োজাহাজ বিশ্বের সবচেয়ে নতুন ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহনে ব্যবহার করা হয়।

ইন্দোনেশিয়ার অনুসন্ধানী দলের সঙ্গে বোয়িং ও মার্কিন জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড যোগ দিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে উড়োজাহাজের ধাতব অংশসহ যাত্রীদের ছেঁড়া কাপড়, জুতা, মানিব্যাগ, ফোন।

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে জাকার্তা ছেড়ে যায় জেটি-৬১০ ফ্লাইটটি। এক ঘণ্টার মধ্যে পাংকাল পিনাংয়ের দেপাতি আমির বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল ফ্লাইটটির। ওড়ার ১৩ মিনিটের মধ্যে কন্ট্রোল প্যানেলের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এটির। শেষ মুহূর্তে পাইলটকে জাকার্তার সুকর্ন হাত্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বলা হয়। বিমানটিতে তিন শিশুসহ ১৮১ জন যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া দুজন পাইলট ও ছয়জন কেবিন ক্রু ছিলেন।

বলা হচ্ছে, উড়োজাহাজটির আগে থেকে যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল। দুর্ঘটনা ঘটার দিনটির আগেই উড়োজাহাজটির ত্রুটি দেখা দেয় বলে কারিগরি লগ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। লায়ন এয়ারও এর সত্যতা স্বীকার করেছে।

বিশাল দ্বীপপুঞ্জের দেশ ইন্দোনেশিয়া যাতায়াতের জন্য উড়োজাহাজের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। তবে দেশটির ফ্লাইট নিরাপত্তা পরিস্থিতি ভালো নয়। এভিয়েশন সেফটি নেটওয়ার্কের তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে প্রায় ৪০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এর আগেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে লায়ন এয়ারের উড়োজাহাজ। ২০১৩ সালে লায়ন এয়ারের ৯০৪ ফ্লাইট বালির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে সাগরে পড়ে যায়। তবে ওই দুর্ঘটনায় উড়োজাহাজের ১০৮ জন যাত্রী ও ক্রু বেঁচে যান। ২০০৪ সালে জাকার্তা থেকে আসা ৫৩৮ ফ্লাইট সলো সিটিতে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৫ জন নিহত হন।

২০১৪ সালে ঝোড়ো আবহাওয়ার কারণে জাভা সাগরে এয়ার এশিয়া বিধ্বস্ত হলে ১৬২ জন নিহত হন।