মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত না থাকায় নিত্যপণ্য আমদানি করতে পারছে না সরকার। মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। ক্ষুব্ধ এসব মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেননি। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আর্থিক দুর্দশাগ্রস্ত শ্রীলঙ্কা প্রবাসী নাগরিকদের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, দেশের এই সংকটকালে তাঁরা যেন দেশে নগদ অর্থ পাঠান। খবর এএফপির
সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল বিবৃতি দিয়ে জানায়, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে খেলাপি হওয়া ছাড়া আপাতত তাদের হাতে আর কোনো পথ নেই। এর এক দিন পর আজ দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের কাছে নগদ অর্থ চাওয়া হলো। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার এখন বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ৫ হাজার ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। সরকার এই ঋণ শোধ করা বন্ধ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নন্দনাল ওয়েরাসিংহে বলেছেন, দেশ এখন বৈদেশিক মুদ্রার মারাত্মক সংকটে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়ে পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিদেশে বসবাসরত শ্রীলঙ্কানদের প্রয়োজন। এর এক দিন আগে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে জানায়, পেট্রল, ওষুধ ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের জন্য অর্থ ছাড় করার কারণে তারা বৈদেশিক সব ঋণ পরিশোধ করা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নন্দনাল আরও বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রা পাঠিয়ে সহায়তার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে ব্যাংক হিসাব খুলে দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি আরও প্রতিশ্রুতি দেন, এই অর্থসহায়তা সেসব খাতে ব্যয় করা হবে, যেখানে প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ব্যাংক নিশ্চয়তা দিচ্ছে, এভাবে আসা বৈদেশিক মুদ্রা শুধু খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মতো নিত্যপণ্য কেনার ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে। তবে গভর্নরের এ আহ্বানে প্রবাসী শ্রীলঙ্কানরা সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত শ্রীলঙ্কান একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে এএফপিকে বলেন, ‘সাহায্য করতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা আমাদের নগদ অর্থ দিয়ে সরকারকে বিশ্বাস করতে পারি না।’ কানাডায় সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত একজন শ্রীলঙ্কান বলছেন, এসব অর্থ যে অসহায় মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে, এ ব্যাপারে কোনো আস্থা নেই তাঁর। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের সুনামি তহবিলের মতোই এসব অর্থ যাচ্ছেতাই খরচ করবে সরকার।
শ্রীলঙ্কায় ওই সুনামিতে ৩১ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। এ জন্য যে তহবিল গঠন করা হয়েছিল তার অর্থ রাজনীতিকেরা নিজেদের পকেটে পুরেছেন বলে অভিযোগ আছে। এর মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে রয়েছেন। তিনি সুনামি তহবিলের অর্থ নিজের ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেন বলেও জানা যায়।
সম্প্রতি দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে ছাড়া মন্ত্রিসভার সব সদস্য পদত্যাগ করেন। ঋণ পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরুর আগে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগে আলোচনা থেমে যায়। নতুন একজনকে অর্থমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে নিয়োগ পেয়ে শপথ নেওয়ার এক দিন পর তিনি পদত্যাগ করেন। তবে তাঁর পদত্যাগপত্র প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে এখনো গ্রহণ না করায় কার্যত তিনি এখনো অর্থমন্ত্রী।